হাইমচর প্রতিনিধি
হাইমচরে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার দক্ষিণ নয়ানী ডেলের বাজার সংলগ্ন মোশাররফ শেখের বাড়িতে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান মিলে। এ নিয়ে উপজেলার সর্বত্র হৈচৈ চলছে। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হাইমচরে কর্মরত স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার একদল সংবাদকর্মী ছুটে যান মোশাররফের বাড়িতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডেলের বাজার সংলগ্ন মৃত ছলেমান শেখের পুত্র মোশাররফ শেখ দোকানে দোকানে রুটি বিক্রি করতেন। হঠাৎ করে গত ছয় মাসের মধ্যে তিনি ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হয়ে গাড়ি বাড়ির মালিকসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যান। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।
এলাকাবাসী থেকে জানা গেছে, ইতিপূর্বে মোশাররফ স্থানীয় সোহেল পাটওয়ারীর সহায়তায় ঢাকা থেকে জাল টাকা এনে হাইমচরের বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জাল টাকার ব্যবসা করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। হঠাৎ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজেই জাল টাকা তৈরির কারখানা খোলার মনস্থির করলেন মোশাররফ। সে মোতাবেক তিনি ঢাকায় আরেক জাল টাকা তৈরির কারখানার সাথে চুক্তি করলেন। চুক্তির শর্ত হলো, বিশ লাখ টাকা তৈরি করে দিলে আসল ছয় লাখ টাকা দিতে হবে এবং যিনি তৈরি করবেন তাকে পারিশ্রমিক বাবদ ৭০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে। সে অনুযায়ী মোশাররফ তার বাড়িতে টাকা তৈরির মেশিনসহ সকল জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রেখেছেন। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা হতে টাকা তৈরির মিস্ত্রি গত ২৩ মে রাতে হাইমচরে মোশাররফের বাড়িতে আসেন। এসে দেখেন টাকা তৈরির কাগজ এবং কালি অসাবধানবশত নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা তৈরি করতে না পারায় এখন তিনি আবার ঢাকা চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে মোশাররফ তাকে অগ্রিম দেয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরৎ চান। এ নিয়ে গতকাল ২৪ মে সকাল সাড়ে ৭টায় মোশাররফ ও মিস্ত্রির সাথে স্থানীয় ডেলের বাজারে প্রথমে তর্কবিতর্ক পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এতেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসে। ডেলের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান গাজীসহ বাজার ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠকে বসেন। সবার চাপের মুখে মিস্ত্রি ডেলের বাজারের হারুনের বিকাশের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা ফেরৎ আনেন। এ সময় মানুষজন জড়ো হতে থাকলে ঘটনাস্থল থেকে মোশাররফ ও মিস্ত্রি পালিয়ে যায়। তাদেরকে পাকড়াও করার জন্য বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মান্নান গাজীর নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে খুঁজতে থাকে। স্থানীয় সমাজসেবক ও বাজাপ্তী আর এম হাইস্কুলের সভাপতি বলেন, খুব অল্প সময়ে জাল টাকার ব্যবসা করে মোশাররফের পরিবার অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যান। প্রশাসন এ মুহূর্তে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হাইমচরে জাল নোটের ছড়াছড়ি বেড়ে যাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সেলিম গাজী, মহসিন, মাইনুদ্দিন, লোড ব্যবসায়ী হারুন ও নেছার বেপারী অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় মোশাররফ ও তার বাহিনী অবাধে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছে। এ নিয়ে বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ঘটনা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মোশাররফের বাড়িতে গিয়েছে। সংবাদকর্মীরাও মোশররফের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার ফোন নাম্বারে (০১৮২৩৬৮৬০০৯) যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বর্তমানে তারা আত্মগোপনে রয়েছে।