মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস অভয়াশ্রমকে পূঁজি করে পদ্মা মেঘনা নদীতে হাইমচর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেলে ও নৌকা আটক করে বিকাশের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় পুলিশের সোর্স স্পীড বোট ও স্টীল বডি ট্রলার ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যে নদী থেকে জেলে ও নৌকা আটক করছে। আটকের পর নদী থেকেই জেলেদের স্বজনদের ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা গ্রহণ করে আটককৃতদের ছেড়ে দিচ্ছে। নদী তুমি কার! হাইমচর থানার নাকি নৌ পুলিশের? এ নিয়ে হাইমচরে ব্যাপক গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। কারণ নিলকমল পুলিশ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আঃ রহমান প্রতিদিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে। তেমনি হাইমচর থানার ওসি মনিরুজ্জামানের নির্দেশে এএসআই কালাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে রাতের আধাঁরে মেঘনা নদীতে স্পীড বোট ও ট্রলার ভাড়া করে নিয়ে অভিযান চালিয়ে জেলে ও নৌকা আটক করে। আটককৃতদের রাতেই তাদের স্বজনদের ফোন করে ছেড়ে দেয়ার নামে বিকাশের টাকায় আদায় করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নীলকমল নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহমানের সাথে হাইমচর থানার এএসআই কালামের বাক বিতন্ডা ও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান রয়েছে।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার এএসআই কালাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নদীতে অভিযান চালিয়ে থেকে জেলে নৌকা ও কারেন্ট জালসহ কয়েকজনকে আটক করে। আটককৃতদের রাতেই টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এ সময় জব্দকৃত ৩টি পাইর কারেন্ট জাল এনে হাইমচর পুরাণ কলেজের মাঠে রাখে। জব্দকৃত মালগুলো হাইমচরের সাঈদ নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে এএসআই কালামের কাছ থেকে ক্রয় করে। মৎস্য ব্যবসায়ী সাঈদ জালগুলো রিক্সায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় গাজীপুরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবু গাজীর মেয়ের জামাতা আলমগীর, খাজু তালুকদার ও বাইট্টা হাবু মেম্বার জালগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব জমাদারের ছেলে বাবু জমাদার বেশ কয়েকবার উভয়কে নিয়ে সালিশী দরবার করেও সমাধান করতে পারেনি। কারণ জাল ছিনিয়ে চক্ররা অভিযোগ করে, সাঈদ এএসআই কালামের কাছ থেকে জালগুলো বিনামূল্যে নিয়ে যাচ্ছে। এ অপবাদের কারণে সাঈদ তার ক্রয়কৃত জালগুলো নিতে পারছেনা। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে হাইমচর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আইয়ুব আলী মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর জলিয়ার চরের জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩০), তোফায়েল রাড়ী (৩০), বশির উল্লা সরকার (৩২), কালা মিয়া (৩৫), হারুন বেপারী (৪০), মোহন (৩০), ফয়সাল বেপারী (২২), ইউসুফ (৪০), সুমন (৩৫)সহ ৯জনকে জাল ও নৌকাসহ আটক করে। আটকের ঘটনাটি জানা জানি হওয়ায় এএসআই কালাম ও মৎস্য কর্মকর্তা তাদেরকে নিয়ে আসে। এ সময় আটককৃতদের ছাড়িয়ে দেয়ার নাম করে এএসআই কালাম তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আটককৃত প্রত্যেককে ৩ মাসের সাঁজা প্রদান করে। আটক হওয়া জেলেদের ছাড়িয়ে নেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় হাইমচরে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া হাইমচরের চরভৈরবী কাটাখাল খুরসার মোড় পশ্চিম পাশে মেঘনা নদীর পাড় থেকে প্রতিদিন রাতে জাটকা বোঝাই ট্রাক ঢাকা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সেই সব জাটকা বোঝাই ট্রাকগুলো থেকে প্রতিদিন নৌ-পুলিশ ও হাইমচর থানা পুলিশ টাকা নিয়ে তাদেরকে পুলিশ পাহাড়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাটকা বোঝাই একটি ট্রাক বোঝাই একটি ট্রাক হাইমচরের দু’ সংবাদকর্মীর উপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশ আটক করলে খবর পেয়ে নীলকমল নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহমান সবাইকে ম্যানেজ করে ট্রাকটি ছেড়ে দিতে সহযোগিতা করে। এ ঘটনাটি হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানতে পেরে নীল কমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহমানকে মোবাইলে ফোন করে সতর্ক করে দেয়। এছাড়া তিনি বিষয়টি চাঁদপুর নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুজ্জামানকে অবহিত করে।
হাইমচর থানার এএসআই কালামের কাছে নদীতে অভিযানের বিষয় জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান। পরে নদীতে নেমে কয়েকজন জেলে আটক করেছে বলে জানান। এ নিয়ে পরে কথা বলবে বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন। নীলকমল নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, নৌ পুলিশের কাজ নদীতে অভিযান করা। কিন্তু হাইমচর থানা পুলিশ নিজেরাই কাউকে না জানিয়ে নদীতে অভিযান পরিচালনা করায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। নদীতে অভিযান পরিচালনা করায় স্বার্থান্বেষী কিছু লোক মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। তার পুরোটাও সঠিক নয়।
জানা যায়, চাঁদপুরের নদী বন্দরের যে সকল ফাঁড়িগুলো রয়েছে তা পূর্বে থানাগুলোর তত্ত্বাবধানে ছিলো। জেলার এসপি ও থানার ওসি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতো। নদীতে যাত্রীদের নিরাপত্তা, নৌ-দুর্ঘটনা কমানো কালোবাজারী ও ডাকাতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার নৌ-পুলিশের নতুন ইউনিট গঠন করেছে। নৌ-পুলিশ থানা পুলিশ থেকে আলাদা করে নতুন ইউনিট গঠন করে কাজ শুরু করে। নৌ-পুলিশের কাজ শুধু মাত্র নদীতে কাজ করা। আর থানা পুলিশের কাজ স্থলভাগে। কিন্তু অভয়াশ্রম চলাকালে এ দু’ মাস নদীতে রমরমা আটক বাণিজ্য করার কারণে ইদানিংকালে হাইমচর থানা পুলিশ নৌ-পুলিশকে তোয়াক্কা না করে নিজেরাই স্পীড বোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা বাণিজ্য করছে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ১৬ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।