চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
হাইমচর উপজেলা প্রকৌশল অফিসে দেড় কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর হয়েছে উপজেলা প্রকৌশল অফিস। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় জুয়েল মৃধা নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশের এসআই আবুল কাশেম শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়।
জানা যায়, হাইমচর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৪৩ গ্রুপের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি’র সহায়তায় ৩০টি গভীর নলকূপ স্থাপন ও সিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য ওই টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সোমবার ছিলো দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। নিয়ম অনুয়ায়ী উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দরপত্র বিক্রির কথা থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বিক্রির জন্য কোনো দরপত্রই দেয়া হয়নি। সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীর গ্রুপের ক্যাডাররা উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ে পাহারা বসিয়ে কাউকে সিডিউল ক্রয় করতে দেয়নি। এতে উত্তেজিত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগের অন্য গ্রুপের ঠিকাদাররা। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর বেপারী, জুয়েল মৃধা, পলাশ, সোহাগসহ কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়। এদের মধ্যে জুয়েল মৃধাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতিতে তাকে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। জেলা সদর হাসপাতালে সাময়িক চিকিৎসা নিয়ে সে লোক চক্ষুর অন্তরালে পালিয়ে যায়।
উপজেলা প্রকৌশলী প্রবীর কুমার জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বিক্রির জন্য দরপত্র পাঠানো সম্ভব হয়নি সংঘর্ষের কারণে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আমার কার্যালয়ও ভাংচুর করা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী জানান, এখানে এমন কোনো কিছুই হয়নি। সুন্দরভাবে সিডিউল বিক্রি হয়েছে। ‘যারা সিডিউল ক্রয় করেছে এরাতো আপনার লোক’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আমার লোক। আমি আওয়ামী লীগ করি আমার লোক না হয়ে কার লোক হবে?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনা শুনেছি। কিন্তু আমি এ উপজেলা থেকে আজ বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি। তাই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
এলজিইডি চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে হাবিব জানান, হাইমচর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের কোনো দরপত্র আমরা পাইনি। বিক্রি করবো কিভাবে?
হাইমচরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাটওয়ারী কনস্ট্রাকশন, মেঘনা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আবু তালেব ট্রেডার্স, মমতাজ এন্টারপ্রাইজ, হাজী সোলেমান ট্রেডার্স-এর স্বত্বাধিকারীগণ জানান, দুটি দরপত্রে ৪৯টি গ্রুপে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ প্রায় দেড় কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম দরপত্রে ৬টি গ্রুপের এবং পরবর্তী দরপত্রের ৪৩ গ্রুপের একটি দরপত্রও আমরা ক্রয় করতে পারিনি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন পাটওয়ারী উপজেলা কমপ্লেঙ্ েঅবস্থান নিয়ে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে দরপত্র ক্রয়ে বাধা দেয়। একই সাথে তিনি ও তার বাহিনী সাধারণ ঠিকাদারদের মারধর এবং প্রকৌশল অফিস ভাংচুর করে। তারা আরো জানান, নূর হোসেন পাটোয়ারী নিজের সুবিধার জন্য উক্ত দেড় কোটি টাকার প্রকল্পসহ নিজের লোক দিয়ে করাবেন সে লক্ষ্যে প্রকৌশল বিভাগের সাথে যোগসাজশ করে প্রাক্কলিত ব্যয় বেশি করে দেখিয়েছেন। এর আগে গত মাসেও দেড় কোটি টাকার কাজ একই প্রক্রিয়ায় নূর হোসেন পাটোয়ারী ও তার লোকজন ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বিকেলে এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন পাটওয়ারী বিক্ষুব্ধদের রোষানল থেকে আত্মরক্ষায় অফিসের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেতর থেকে আটকে দেন।