হাইমচর:
হাইমচরের একমাত্র উচ্চ বিদ্যাপীঠ হাইমচর কলেজ নামে খ্যাত হাইমচর মহাবিদ্যালয়। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হাইমচরবাসীকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষে তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। প্রায় বারো শ’ ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রয়েছেন প্রায় ত্রিশ জন শিক্ষক। নিজের কলেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, মূলত হাইমচর কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে হাইমচরের হত দরিদ্র, নদী ভাংতি এবং বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার পূর্বে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে হাতে গোণা ক’জন ঢাকা-চাঁদপুর থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করলেও নারীরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বেশ পিছিয়ে পড়ত। হাইমচর কলেজ সে সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তিরি আরো জানান, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কলেজটি নিঃসন্দেহে চাঁদপুরের অন্যতম একটি ভালো কলেজ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাইমচর কলেজে যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে তার জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ নেই। কলেজটিতে একটি বিজ্ঞান ল্যাব থাকলেও তাতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। অন্যদিকে কলেজের সামনে ডোবার কারণে খেলার মাঠ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে কলেজ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করণের ক্ষেত্রে ডোবা ভরাটের মাধ্যমে খেলার মাঠ সমপ্রসারণ করা বিশেষ প্রয়োজন।
কলেজের সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ জানান, কলেজটির বর্তমান সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে কলেজের সার্বিক সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। কলেজে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তিনি ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে কলেজের উন্নয়নের লক্ষ্যে বহুতল বিশিষ্ট একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কলেজ সভাপতি দ্রুত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি কলেজটির উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকাবাসী, জেলা প্রশাসন ও চাঁদপুরের মন্ত্রীদ্বয়ের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির একান্ত প্রচেষ্টায় কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, কলেজের নিচু অঞ্চলের মাঠ ভরাটকরণ, কম্পিউটার ল্যাব সমৃদ্ধ ও কমন রুমের উন্নয়ন কাজ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ কলেজে রয়েছে প্রায় তিন হাজার বই সমৃদ্ধ কলেজ লাইব্রেরি। হাইমচর কলেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসলাম শিক্ষার সহকারী অধ্যাপক এটিএম রুহুল আমিন ও গণিতের প্রভাষক অনুপ কুমার সাহা বলেন, নদী সিকস্তি হাইমচরবাসীর একমাত্র আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এই বিদ্যানিকেতনটি। ফলে হাইমচরবাসীর এই আশাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা পাঠদানে আন্তরিক উল্লেখ করে বলেন, গ্রামের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন যথাযথ শিক্ষা পায় সে ব্যাপারে আমরা আন্তরিক। ফলে হাইমচর কলেজের ফলাফলে আসছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কেননা যদিও এটি থানা পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু এর শিক্ষাদান পদ্ধতি আধুনিক মানের নতুন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে এ ফলাফল আরো ভালো করা সম্ভব বলে তারা জানান।
হাইমচর উপজেলার একমাত্র কলেজ হাইমচর মহাবিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিশ কিলোমিটারের মধ্যে আর কলেজ নেই। যার কারণে হাইমচরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এসএসসি পাস করার পর এই কলেজে অধ্যয়ন করতে আসে।
বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিৰা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা এই চারটি বিভাগে শিক্ষাক্রমের আওতায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ১০টি জিপিএ-৫সহ কুমিলস্না শিক্ষা বোর্ডের টপ-২০’এর অন্তর্ভূক্ত হয়। গত দু’ বছরের ফলাফল অনুযায়ী তথা ২০১১ সালে এই কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ২৯৮ জনের মধ্যে ৯২.৯৫ ভাগ পাসের হার নিয়ে মোট উত্তীর্ণ হয় ২৭৭ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ২০১২ সালে কলেজটির মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৩২৪ জন এবং ফলাফলে পাসের হার ৭৬.৮৫ ভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ২৪৯ জন শিৰার্থী।
হাইমচরবাসীর আশার কথা এ বছর সন্তোষজনক ফলাফলের কারণে হাইমচর কলেজে যুক্ত হবে ডিগ্রি কোর্স যা ডিগ্রি ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্তির মাধ্যমে চালু হবে।
১২ জন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দ্বারা পর্যবেক্ষিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি সপ্তাহে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং নিয়মিত প্রকাশ হয় ‘মেঘনা’ নামক দেয়াল পত্রিকা।
হাইমচরবাসীর প্রাণের দাবি কলেজে ফলাফল উত্তরোত্তর ভালো হবে এবং সার্বিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে হাইমচর কলেজটি একটি আদর্শ কলেজ হিসেবে চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আলোকিত করবে হাইমচর উপজেলার প্রতিটি শিক্ষার্থীকে।