হাইমচরের বহুল আলোচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান একাধিক জালিয়াতি মামলার পলাতক আসামি সাজাপ্রাপ্ত ।
সৈয়দা আয়েশা সিদ্দিকা ও তার স্বামী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রতারণা মামলায় এখন শরীয়তপুর জেলহাজতে।
এ ঘটনায় উপজেলার সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ রয়েছে তার ক্ষমতার প্রভাবের কাছে অনেকই দমবন্ধ হয়ে থাকেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও চায় না।
মামলার বাদী শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার বালারবাজার এলাকার সিকদারকান্দি গ্রামের আলম শিকদারের ছেলে ফরিদ শিকদার হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সাজার বিষয়ে লিখিতভাবে জানান। ঐ সূত্রে জানা যায়, বাদী ফরিদ শিকদার হাইমচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা আয়েশা সিদ্দিকার মালিকানাধীন এটিএল ব্রিক ফিল্ড হতে ৩ লাখ ইট কিনেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইট না দিয়ে সমপরিমাণ ইটের মূল্যের চেক প্রদান করেন। কিন্ত টাকা না দিয়ে প্রায় তিন বছর যাবত পালিয়ে বেড়ান। টাকা না পাওয়ায় ফরিদ শিকদার বাদী হয়ে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সৈয়দা আয়শা সিদ্দিকা ও তার স্বামী ব্রিক ফিল্ডের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে প্রতারণার অভিযোগে মামলা (সিআর-১৩৯/২০১২) মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত ২ বছরের সাজা প্রদান করলে সাজাপ্রাপ্ত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামী গত ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুর আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা আয়েশা সিদ্দিকা ও তার স্বামী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন শরীয়তপুরে প্রতারণা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল হাজতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার বাদী ফরিদ সিকদার সাজা ও মামলার বিষয়টি লিখিতভাবে তার দপ্তরে জানিয়েছেন।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান ভাইস চেয়ারম্যানের সাজা ও জেল হাজতে থাকা বিষয়ে বলেন, লোক মুখে শুনেছি। অফিসিয়াল কোন কাগজ পাইনি।
এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, বহুবিবাহিত সৈয়দা আয়েশা সিদ্দিকা ফাঁদ পেতে হাইমচরের প্রকৌশলী ও ব্রিকফিল্ড মালিক ধর্ণাঢ্য আনোয়ার হোসেনের ২য় স্ত্রী হিসেবে ১/১১-এর সময় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তৎকালীন প্রশাসনের সহায়তায় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের নয়ানীস্থ বাড়িতে ওঠেন। সেই থেকে তার উত্থান। উপজেলা নির্বাচন আসলে ঐ মহলের সহায়তায় সস্তা ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে ফেলেন। এক পর্যায়ে বেপরোয়া আয়েশার খপ্পরে পড়ে প্রকৌশলী তার প্রথম স্ত্রী দু’কন্যা সন্তানের জননীকে একতরফা তালাক দিতে বাধ্য হন। সেখানেই ক্ষান্ত না হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান স্বামীর সব ব্যবসা ও সহায় সম্পদ নিজের নামে করে নেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হয়। লোভী আয়েশার খপ্পরে পড়া প্রকৌশলী আনোয়ার সাবেক এমপি প্রফেসর আব্দুল্লাহ ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের শেয়ারে হাইমচরের পাশাপাশি শরীয়তপুরে এটিএল নামে ব্রিকফিল্ড ব্যবসা দেন। সেখানেও বনিবনা না হওয়ায় পার্টনাররা সরে পড়ে। পারিবারিক অশান্তির ফলে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ায় চরম বেকাদায় পড়ে লোভী আয়েশার প্ররোচনায় প্রকৌশলী আনোয়ার তার আপন ভাইদের সাথে নানা ছুতোয় বাড়ি থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে মারা-মারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ মামলা-হামলা করে পরিবারের লোকজনকে হয়রানী করেন। ভাইস চেয়ারম্যান তার বন্ধুদের সহায়তায় স্বামীর সম্পদ আত্মসাতে ব্যস্ত থাকলে হাইমচর এবং শরীয়তপুর ব্রিক ফিল্ড ব্যবসায় চরম ধস নামে। ফলে ব্যবসায় অগ্রিম ইট বিক্রি করে ফিল্ড চালু করতে না পারায় গ্রাহকরা ইটও পায়নি। এদিকে টাকা ফেরত না পাওয়ায় গ্রাহকদের তাগাদায় ব্রিকফিল্ড বন্ধ করে আত্মগোপনে যায় ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামী।
বর্তমানে হাইমচর ব্রিকফিল্ড মাঝপথে বন্ধ থাকায় চরম বেকায়দায় আছেন পাওনাদাররা। হাইমচরের পাওনাদারদের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
হাইমচর ব্রিকফিল্ডের পার্টনার শামছুল আরেফিন বাবলু পাটওয়ারী জানান, হাইমচরে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা দেনা রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামীর।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ