গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু দুই বোন। বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। তাঁরা এবার ৪১তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। জান্নাত সুমি শিক্ষা ক্যাডারে আর জান্নাতুন নাঈম কৃষি ক্যাডারে। ৩ আগস্ট সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ এলাকার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এয়াকুব মিয়া ও গৃহিণী রুপিয়া বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে দুজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করল।
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষিকা ফারজানা কুমকুম বলেন, ‘তাঁরা দুই বোন আমাদের কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের এই ধারাবাহিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত।’
তাঁদের নিকটাত্মীয় তাহমিনা আক্তার বলেন, কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় করে তাঁদের অর্জিত এ সাফল্যের আনন্দ তুলনাহীন।
গুলে জান্নাত ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ সেশনে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
গুলে জান্নাত বলেন, ‘আমার শৈশব ও বেড়ে উঠা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে চট্রগ্রাম থেকে নিয়মিত ঢাকায় গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেওয়া কষ্টকর। তাই মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ঢাকায় চলে যাই। হঠাৎ করে ঢাকায় আসায় থাকার সমস্যা, মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা শুরু হয়। ঢাকায় আসার পর বুঝতে পারি, চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমি অনেক পিছিয়ে আছি। পরিবারের ওপর চাপ কমানোর জন্য এবং একই সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আঞ্জুমান মোখলেছুর রহমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইনস্টাক্টর পদে যোগ দিই। সেই সঙ্গে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষাবিষয়ক পড়ালেখা শুরু করি। চাকরি করার পাশাপাশি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি।
২০১৬ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএস দিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা শুরু হয়। ৩৮তম বিসিএসে আশানুরূপ ফল না পেয়ে স্বপ্নপূরণের জন্য পুনরায় নতুন উদ্যোমে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। এভাবে দেখতে দেখতে ৪০তম বিসিএসের ফলাফলের দিন চলে আসে। সেখানে নাম না দেখে হতাশায় ভেঙে পড়ি। এ বিসিএসের ফলাফলে নিজের রোল আছে নন-ক্যাডার তালিকায়। ৪০তম বিসিএস থেকেই নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন করে জটিলতা শুরু হলে আমারও শুরু হলো আর এক অসহনীয় কষ্টের যাত্রা। ভবিষ্যতের শঙ্কায় দিনের পর দিন উৎকণ্ঠা আর তার ফলে রাতের পর রাত কেটেছে নির্ঘুমে। চোখের জলও যেন মনে হচ্ছিল ফুরিয়ে যাচ্ছিল।
অবশেষে ৩ আগস্ট সারাদিন অপেক্ষার পর যখন ফলাফল তালিকায় দুই বোনের রোল নম্বর একই সঙ্গে দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০১৬ সালে শুরু শুরু হওয়া বিসিএসএর স্বপ্ন ২০২৩–এ এসে তা পরিপূর্ণতা পায়। এ জন্য সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ তায়ালা ও পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।
সুত্রঃ প্রথম আলো