প্রতিনিধি
হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভাসহ প্রতিষ্ঠিত শতাধিক কো-অপারেটিভ গ্রাহকের জমাকৃত কোটি কোটি টাকা নিয়ে যে কোন সময় উধাও হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধান করে এবং গ্রাহকদের অভিযোগে জানা যায়, গত ১৪ বছরে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভার মধ্যে প্রায় দু’শতাধিক কো-অপারেটিভ বা বহুমুখী সমবায় সমিতি মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা সমবায় অফিস থেকে অনুমোদন লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের গত ৫ বছরের অনুমোদন পায় ৯০টির অধিক প্রতিষ্ঠান। আর এগুলোর অধিকাংশ মালিক হচ্ছে জামায়াত নেতা-কর্মী। এ সকল কো-অপারেটিভ নাম মাত্র অনুমতি নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারে এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝাঁকঝিঁকভাবে অফিস নিয়ে বসে। এরপর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করে। লোকবল নিয়োগের সময় যে সকল প্রার্থী টাউট প্রকৃতির এবং সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নবকায়দায় অর্থ আদায় বা এফডিয়ার এবং ডিপিএস করতে পারবে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগরে সময় নিয়োগ প্রাপ্তকে বিভিন্ন শর্ত দেয়া হয়। যে শর্ত পালন করতে পারবে তাকেই মাত্র নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ প্রাপ্তরা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তাদের এলাকার কার কার কাছে অর্থ আছে প্রথমে তাদেরকে নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী এক এক দিন এক এক জনের কাছে গিয়ে নিজ নিজ সমিতির প্রশংসা করতে থাকে। আবার নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন ব্যাক্তিকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজেকে অনেক ক্ষমতাবার বলে এলাকায় পরিচয় দিয়ে থাকে। এর পর যে সকল ব্যাক্তির কাছে নগদ টাকা আছে তাদেরকে প্রস্তাব দেয়া হয় ব্যাংকে টাকা পরে থেকে লাভ কি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখলে প্রতি লাখে প্রতি মাসে ২/৩ হাজার টাকা করে পাবেন। আর এ টাকা দিয়ে আপনাদের প্রতিমাসে সংসার চলবে। টাকাতো ঠিকই থাকবে। আপনাদের যখন টাকার প্রয়োজন হবে আমি আপনাদেরকে টাকা ফেরৎ দিয়ে দেবো। এভাবে কয়েক মাস তাদেরকে লাভ দিতে থাকে। প্রত্যেকটি কো-অপারেটিভ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। আর ঐ টাকা দিয়ে কো- অপারেটিভগুলো জায়গার ব্যবসা, মুরগীর ব্যবসা, গরুর ব্যবসাসহ নানা ব্যবসা দিয়ে থাকে।
টাকা পরিমান যখন কোটি কোটির বেশি হয়ে যায় তখন কো-অপারেটিভগুলো জমাকৃত ব্যক্তিদেরকে প্রতিমাসের টাকা দিতে টানবাহানা শুরু করে। এভাবে কয়েক মাস বা বছর গেলে কো-অপারেটিভগুলো লাভের অংশ না দিয়ে গ্রাহকদেরকে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে যখন গ্রাহকরা জমাকৃত টাকা উত্তোলণের জন্য চাপ সৃষ্টি করে তখন কো-অপারেটিভগুলো সুকৌশলে সকল গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। আবার কয়েক মাস পর অফিস পরিবর্তন করে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গ্রাহকরা অফিসে আসলে দেখতে পায় অফিসের দরজায় তালা লাগানো। আবার যারা কৌশলে অফিস পরিবর্তন করেছে তাদের অফিসে গেলে পাওয়া যায় শুধুমাত্র পিয়নকে। এভাবে হাজীগঞ্জের শতাধিক কো-অপারেটিভ সাধারণ মানুষের জমাকৃত কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। আর গ্রাহকরা তাদেরকে খোঁজ করেও পায়না।
আর এ কো-অপারেটিভগুলো উধাও হয়ে যাওয়া পথে সেগুলো মধ্যে স্বদেশ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ, মেঘনা কো- অপারেটিভ, বসুন্ধরা কো-অপারেটিভ, ইকরা কো-অপারেটিভ, আইডিয়াল ক্-োঅপারেটিভ, ডায়মন্ড কো-অপারেটিভ, সাক্সেস কো-অপারেটিভ, অগ্রগামী কো-অপারেটিভ, জীবনধারা কো-অপারেটিভ, স্বনির্ভর বহুমুখী সমবায় সমিতি,অলিপুর বহুমুখী সমবায় সমিতি, প্রগতি বহুমুখী সমবায় সমিতি, দিশারী বহুমুখী সমবায় সমিতি,স্বাধীন বহুমুখী সমবায় সমিতি, আল ফালা বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি, সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি, শাপলা বহুমুখী সমবায় সমিতি, মালিগাঁও সমবায় সমিতি, স্বপ্ননীঁড় বহুমুখী সমবায় সমিতি, আহম্মেদপুর একতা বহুমুখী, এশিয়নেট বহুমুখী সমবায় সমিতি, সোনালী বহুমুখী সমবায় সমিতি, কাশিমপুর বহুমুখী সমবায় সমিতি, ফিরোজপুর বহুমুখী সমবায় সমিতি, লোটাস বহুমুখী সমবায় সমিতি, দি হাজীগঞ্জ বহুমুখী সমবায় সমিতি, তারালিয়া সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি, হোটনী ইসলামীয়া বহুমুখী সমবায় সমিতি, সেবা বহুমুখী সমবায় সমিতি, গ্রীণ লাইফ বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনতা বহুমুখী সমবায় সমিতি, কনফিন্ডেন্স বহুমুখী সমবায় সমিতি, হাজীগঞ্জ ইসলামিয়া বহুমুখী সমবায় সমিতি, রামপুর হিমালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি, প্যাসিফিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, জননী বহুমুখী সমবায় সমিতি, প্রয়াস বহুমুখী সমবায় সমিতি, আল আক্সা বহুমুখী সমবায় সমিতি, প্রভাতী বহুমুখী সমবায় সমিতি, নাছিরকোটের ইনসাফ বহুমুখী সমবায় সমিতি, সেতুবন্ধন বহুমুখী সমবায় সমিতি, পূবাচল বহুমুখী সমবায় সমিতি, মর্ডাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি, ক্লাসিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, রুলার কো- অপারেটিভ, রামপুরের নবদিগন্ত বহুমুখী সমাবয় সমিতি, বাঁধন বহুমুখী সমবায় সমিতি, ম্যাক্সিম বহুমুখী সমবায় সমিতি, এশিয়ান কো-অপারেটিভ,স্টার বহুমুখী সমবায় সমিতি, সবুজ পল্লী সমবায় সমিতি, নিউ ভিশন বহুমুখী সমবায় সমিতি, ব্রাইট ইষ্টার বহুমুখী সমবায় সমিতি, নবদিগন্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি, নিউ উত্তরা বহুমুখী সমবায় সমিতি।
এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। আর অধিকাংশ মালিক হচ্ছেন জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। আবার অনেক গ্রাহক উধাও হয়ে যাওয়া বা নিখোজ হওয়া বহু প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে। গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন ব্যাক্তিরা বা এলাকার লোক দিয়ে বুঝানো হয়েছে কো- অপারেটিভে টাকা রাখলে লাভ বেশি দিবে। সে মতে আমরা সমিতিগুলোতে টাকা জমা রেখেছি। কয়েক মাস আমাদেরকে লাভ দেয়া হলেও পরে কো-অপারেটিভগুলোর মালিকরা লাভ দেয়া বন্ধ এবং আামাদের জমাকৃত টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। আমরা বারবার তাদের অফিসে গেলেও তাদেরকে ঠিক মতো অফিসে পাই না। আবার যদি পাই তারা আমাদের টাকা দিবে, দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায় আমরা টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তারা হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। আমরা আর তাদেরকে খুঁজে পাই না। আমাদের বেঁচে থাকার পুরো অর্থ তারা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পথে। আবার কোন প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে গেছে।
তারা আরো বলেন, আমাদের টাকা নাকি অনেক পরিচালক আত্মসাত করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে দেয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। যার কারণে আমাদের টাকা দিতে পারেন না । আবার যেগুলো টাকা দিতে চায় তারা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের কারণে আমরা টাকা পাচ্ছি না।
এব্যাপারে কয়েকজন কো-অপারেটিভ-এর মালিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্যে এসব সমিতিগুলো করেছিলাম সে উদ্যেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ সাধারণ মানুষের জমাকৃত টাকা যথাযথ কাজে ব্যবহার, নিজেদের ওজনের চেয়ে প্রকল্প বেশি, অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি, কিস্তি আকারে ব্যবসায়ীদেরকে টাকা লোন দেয়া, বেশি মূল্যে জমি ক্রয় করাসহ নানা অনিয়ম ছিল। এ জন্য আমাদের প্রায় শতাধিক সমিতি দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর আমানতকারীরা এক যোগে টাকা উত্তোলনের জন্য চাপসৃষ্টি করার কারণে আামদের সমিতিগুলোর এ অবস্থা। এছাড়াও অনেক সমিতির মালিক গ্রাহকের জমাকৃত টাকা আতœসাত করে চলে গেছে তাও সত্য। শেষ পর্যন্ত ১০/১৫টি কো- অপারেটিভ টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকীগুলো যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাবে।
হাজীগঞ্জের কো-অপারেটিভের অর্থ জঙ্গী সংগঠন বা সন্ত্রাসীদের পেছনে ব্যয় করা হয় এমন প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান যদি এ সকল কাছে অর্থ ব্যয় করে সেটা সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার। তা আমাদের জানা নেই। তারা আরো বলেন, ইতিমধ্যে যে সকল প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে গেছে, তার জন্য হাজীগঞ্জে কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতা ছিল। এ প্রভাবশালীরা সমাধানের নাম বলে কো- অপারেটিভ থেকে বহু টাকা নিয়েছে। এ জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এ অফিসে দায়িত্ব নেয়ার আগেই শুরু হয়েছে কো-অপারেটিভগুলোর বিশৃঙ্খলা। আর আমার আমলে আমি যতগুলো অনুমোদন দিয়েছি সেগুলো যাছাই-বাছাই করে দিয়েছি। কিন্তু আমি আসার পরে বহু প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদেরকে টাকা আদায় করে দিয়েছি এবং আরো অনেকগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।