হাজীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা হয়েছে। হামলা করে আওয়ামী লীগের মঞ্চ ভাংচুর ও ব্যানার পুড়িয়ে ফেলা হয়। পুলিশ বলছে হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশ। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী একটি সংগঠন এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিবাদমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাজীগঞ্জ পশ্চিমবাজার বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীসহ যাত্রীসাধারণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ বেশ কজন আহত হলেও গুরুতর আহত হয়নি কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ হাজীগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে দিনক্ষণ ঠিক করে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায়। সাংগঠনিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আহ্বান করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হেলাল উদ্দিন মিয়াজীসহ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যাপক কর্মী-সমাবেশ ঘটাতে ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানের জন্যে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে হঠাৎ করে একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্মিত প্রতিবাদ সমাবেশ মঞ্চ ভাংচুরসহ মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় পাশের চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওই যুবকেরা। এ সময় কার্যত চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেই আওয়ামী লীগের সমাবেশে আসা লোকজনের সংখ্যা কমতে শুরু করে। এরই মধ্যে ভাঙ্গা মঞ্চের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সভা শুরু করলে এক পর্যায়ে চৌরাস্তা এলাকার কচুয়া সড়কের ভেতর থেকে একদল যুবক এসে ফের আওয়ামী লীগের সভাস্থলের পাশে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। সভাস্থলের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ কচুয়া সড়কের অবস্থানকারী যুবকদেরকে ধাওয়া করলে ওই যুবকরা আওয়ামী লীগের লোকদের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে তেড়ে আসে। এ সময় আওয়ামী লীগের কিছু লোক একবার ওই যুবকদের ধাওয়া করে আবার পিছু হটে আসে। এর পরেই পুলিশ কচুয়া সড়কে অবস্থান করে ইট ছোঁড়া যুবকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর পরেই আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা শুরু হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হেলাল উদ্দিন মিয়াজীর সভাপ্রধানে ও সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল মুঠোফোনে তার বক্তব্য শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ নাসির উদ্দিন ভঁূইয়ার বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যে সভার পেছনের একটি গলির ভেতর থেকে একদল যুবক এসে হামলা করলে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ কচুয়া সড়কের অবস্থানে থাকা যুবকদেরকে ধাওয়া করলে ফের আরেক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই যুবকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। তবে মারাত্মকভাবে কেউ আহত হয়নি। এর পরেই পুলিশ কচুয়া সড়কে অবস্থান নিলে এদিকে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন বলেন, এটা আমাদের নিজস্ব কোনো সভা নয়। জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করি। যারা এ সভাবেশের মঞ্চ ভাংচুরসহ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই। অপর এক প্রশ্নে গাজী মাঈনুদ্দিন বলেন, আজকের এই হামলা আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন করেছে। এর দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া থামাতে গিয়ে আমাদেরকে ১২২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ব্যবহার করতে হয়েছে। এছাড়া ২ প্লাটুন পুলিশসহ ডিবি পুলিশ কাজ করেছে। অপর এক প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ নিজ থেকে কোনো মামলা করবে না। তবে কেউ মামলা দিলে চাইলে আমরা মামলা নেবো।