ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি =
১৮ দলীয় জোটের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে ৮-১০জন আহত হয়েছে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশ ২৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এছাড়া দিনব্যাপী বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে অবরোধ পালন করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এ দিন সকালে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ অংশের বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের বলাখালে রেল লাইনে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। এছাড়া হাজীগঞ্জ বাজার, বলাখাল ও দেবপুরে দিনভর বিক্ষোভ করেছে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। আর উপজেলার প্যারাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে দেয়নি জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। দিনব্যাপী হাজীগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন ছিলো। গতকাল হাজীগঞ্জে সারাদিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ চললেও সন্ধ্যার পরে হাজীগঞ্জ বাজারে আকস্মিক ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এশার আযানের কিছু আগে বাজারস্থ আওয়ামী লীগ অধু্যষিত এলাকা ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সামনে রাস্তায় টায়ারে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। তখন আওয়ামী লীগ কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা একত্রিত হয়ে অবরোধকারীদের ধাওয়া করে। অবরোধকারীরা ধাওয়া খেয়ে পিছু হটে। এর পরেই আওয়ামী লীগ বাজারে একটি বিশাল মিছিল বের করে। তখন অবরোধকারীরা হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মিছিলে আক্রমণ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। শুরু হয়ে যায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার অনেক পরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশ থানা থেকে বাজারে আসে। পুলিশ এ সময় উভয় দলের কর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। এর কিছু পরেই অবরোধকারীরা বড় পুল পার হয়ে বাজার থেকে সরে গেলে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ ঘটনায় উভয় দলের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেলেও রাতের অন্ধকারে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার ভোর থেকেই উপজেলার বাকিলা বাজারে শ’ শ’ গাছের গুঁড়ি ফেলে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ স্থানে দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেছে তারা। সকাল ১০টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের বলাখাল রেল স্টেশন এলাকায় রেল লাইনে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। আগুন দেয়ার পর আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া করে ও আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ সময় ৫নং সদর ইউনিয়ন যুবদল নেতা জুলহাস চৌধুরী আওয়ামী লীগ কর্মীদের হাতে আহত হন। অবরোধ চলাকালীন হাজীগঞ্জ বাজার, বলাখাল বাজার, বাকিলা বাজার, দেবপুর, আলীগঞ্জ ও এনায়েতপুরে বিৰিপ্তভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের সেন্দ্রা-বেলচোঁ বাজারেও বিৰোভ মিছিল করেছে জোট নেতা-কর্মীরা। উপজেলার প্রধান শহর হাজীগঞ্জ বাজারে সকাল থেকে অবরোধ করে সড়ক বন্ধ করে দেয় অবরোধকারীরা। বাজারের বিভিন্ন স্থানে দিনব্যাপী টায়ার জ্বালিয়ে রাখা হয়। দুপুরের দিকে পূর্ব বাজারে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তেজিত কর্মীরা হাজীগঞ্জ থানা রোডের সম্মুখে অবস্থিত থানার নামফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। পরে এএসপি (সার্কেল) ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের সাথে কথা বললে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে পড়ে। এর পরেই বাজারে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে দিনব্যাপী বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। সারাদিন হাজীগঞ্জ বাজারে বর্ডার গার্ডকে টহল দিতে দেখা গেছে। এদিকে উপজেলার কালচোঁ ইউনিয়নের প্যারাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন জামায়াতের কর্মীরা বিদ্যালয়ে ঢুকে ক্লাস বন্ধ করে দেয়। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদিন আর ক্লাস নেয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলী রেজা আশরাফী জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না থাকলে ক্লাস করবে কি করে। এদিকে সোমবার রাতে তফসিল ঘোষণার পর পরই উপজেলার হাটিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা। এ ঘটনায় যুবলীগের তিন কর্মী মারাত্মক আহত হয়েছে। ঐ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। হাজীগঞ্জ বাজারের সংঘর্ষের ঘটনায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কুতুব উদ্দিন জানান, বাজারের পরিবেশ এখন শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে আমাদেরকে ২৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল ব্যবহার করতে হয়েছে।