বিশেষ প্রতিনিধি
হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা (পূর্ব) ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন মিয়াজীর বিরুদ্ধে এলজিএসপির ১০টি প্রকল্পের কাজ না করে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৯৭৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
চেয়ারম্যানের কার্যালয় ও ইউপি সদস্যদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে এলজিএসপি (লোকাল গভঃ স্পেশাল প্রজেক্ট) থেকে ২টি কিস্তিতে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৯৭৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেন।
এলজিএসপি প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়ম অনুযায়ী মাটির কাজ ছাড়া ২৫ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে পাকা কোনো কাজ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করতে হয়। প্রকল্প প্রণয়নের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কাজ দূরে থাক এখনো ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি।
ইউএনও কার্যালয়ে দাখিল করা ১০টি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বেলঘর সুলতান সরদার বাড়ি থেকে মালি বাড়ি পর্যন্ত ইরি স্ক্রীমের খাল খননসহ বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ ২ লাখ টাকা, দক্ষিণ পশ্চিম হাটিলা বকাউল বাড়ির সামনে পাইপ কালভার্ট নির্মাণ ৬০ হাজার টাকা, পূর্ব হাটিলা মিল বাড়ি আড়ং বাজারে টয়লেট নির্মাণ ৮০ হাজার টাকা, ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬০ হাজার টাকা, বলিয়া-বেলঘর হতে বেপারী বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসি দ্বারা নির্মাণ ৮০ হাজার টাকা, হাড়িয়াইন মির্জা বাড়ির সামনের রাস্তার উপর কালভার্ট নির্মাণ ৫৯ হাজার ৯৭৪ টাকা।
দ্বিতীয় কিস্তির প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বেলঘর হাটখোলা বাড়ির কবিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসি দ্বারা পাকাকরণ ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, বেলঘর লেদা পাটওয়ারীর দোকান থেকে সুজার বাড়ি পর্যন্ত ইটের সলিং ও ঢালাই ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, বলিয়া-বেলঘর রাস্তার উন্নয়ন ৫৩ হাজার টাকা এবং বেলঘর বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য পাকা ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা।
কয়েকটি প্রকল্প এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একই রাস্তার উপর ২টি প্রকল্প দেখানো হয়েছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে খননকৃত খালের উপর বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি চেয়ারম্যান তার নিজ গ্রামে দেখিয়েছেন।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলঘর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, আমার গ্রামের ৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১টি প্রকল্পের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট ৫টি প্রকল্পের খবর নেই।
এ দিকে ২০ জুলাই ডিস্ট্রিক্ট প্যাসেলেটর (ডিএফ) শাহরিয়ার রহমান ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে প্রকল্পগুলো দেখতে ইউপি কার্যালয়ে যান। এ সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ইউপি সদস্যরা বলেন, প্রকল্পের কাজ দূরে থাক কোনো কাগজপত্রই চেয়ারম্যান দেখাতে পারেননি। পরে তিনি চেয়ারম্যানকে ধমকিয়ে এবং কাজ শুরু করার তাগাদা দিয়ে কার্যালয় থেকে চলে যান।
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার রহমান বলেন, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের কোনো কাজ চেয়ারম্যান এখনো শুরু করেননি। এমনকি ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরের কয়েকটি কাজও তিনি শেষ করেননি। এ বিষয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। তিনি আরও বলেন, গত মাসে আমি সরজমিনে তার (চেয়ারম্যানের) কার্যালয়ে গেলে আলমারির চাবি হারানো গেছে বলে তিনি আমাকে কোনো কাগজপত্র দেখাননি।
এসব বিষয়ে সোহরাব হোসেন দাবি করেন, বর্ষাকাল মালামাল নেয়াতে অসুবিধা হওয়ায় তিনি কাজ শুরু করতে পারেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন খালে প্রকল্প নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কাজ করেছি কিনা এলাকার মানুষ দেখেছে। তিনি প্রশ্ন করেন এভাবে বার বার বাধা আসলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।