হাজীগঞ্জের বিভিন্ন বাজারসহ পৌর এলাকায় লাইসেন্স না নিয়ে খুচরা বাজারে অবৈধভাবে সার বিক্রি হচ্ছে। লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীরা খুচরা সার বিক্রির কারণে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আবার লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে বাজারে সার বিক্রির কথা প্রচলিত আছে। সবেমাত্র ইরিগেশনের মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনুমোদনহীন এ সকল সার বিক্রেতার অতিরিক্ত দামে বিক্রির কারণে কৃষকরা হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে অবৈধ সার বিক্রির জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা দায়ী বলে অনেক সচেতন সার বিক্রেতা মনে করেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, লাইসেন্সহীনদেরকে সহসা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
জানা যায়, সার বিক্রয়ের জন্য উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিএসটিআই-এর লাইসেন্স দুই ভাগে দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে মূল ডিলারগণ সরাসরি লাইসেন্সের মাধ্যমে মিল গেট থেকে সার সংগ্রহ করে। খুচরা ও খোলা বাজারে বিক্রির জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ইউনিয়ন ভিত্তিক সাব ডিলার নিয়োগ হয়ে থাকে। ডিলার আর সাব ডিলার সবাইকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা, নির্দিষ্ট মাপের গুদাম, খুচরা বিক্রির দোকান ও অভিজ্ঞতা থাকাদেরকে দেয়া হয়। আবার সাব ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি ইউনিয়নে ৯ জনের অধিক লাইসেন্স দেয়ার কোনো সরকারি বিধান নেই। আর ডিলার থেকে সাব ডিলাররা সার ক্রয় করে প্রান্তিক পর্বে ইউনিয়ন ভিত্তিক গ্রামের বাজারগুলোতে খুচরা দামে সার বিক্রি করে থাকে। এই সকল ডিলার ও সাব ডিলার সরকারের নির্দিষ্ট দামে বাজারে সকল প্রকার সার বিক্রি করতে বাধ্য। এটাই হচ্ছে সরকারি নিয়মে সার বিক্রির বিধান। উপরোক্ত নিয়মের বাইরে যারা সার বা কীটনাশক বিক্রি করবে তারাই অবৈধ সার বিক্রেতা হিসেবে আইনে গণ্য হয়ে থাকে। হাজীগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায় এর বাস্তবতা। হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল বাজারে সার ও কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী আঃ মতিন মজুমদার। ২০০৯ সাল থেকে এই ব্যবসায়ী নিয়মিত সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে সার বিক্রি করছে। কিন্তু একই বাজারে অবৈধভাবে সার বিক্রি করছে স্থানীয় সুবিদপুর এলাকার মৃত ফাজিল উদ্দিন সর্দারের ছেলে তাজুল ইসলাম সর্দার ও ধেররা এলাকার আনোয়ার হোসেন।
উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ফকির বাজারে সারের লাইসেন্স পেয়ে ব্যবসা করছেন শহিদ ইকবাল ও সিরু হাজী। আবার একই বাজারে লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও দেদার সার ও কীটনাশক বিক্রি করছে আঃ হাকিম বেপারী ও সাইফুল ইসলাম টিপু তালুকদার।
এ বিষয়ে শহিদ ইকবাল জানান, ফকির বাজারে লাইসেন্স পেয়েছি আমরা দুজন। অথচ ব্যবসা করছি ৪ জনে এটা কীভাবে সম্ভব? এই যদি হয় ব্যবসার ধরন তাহলে আর আমাদের লাইসেন্স করে এতো টাকা খরচ করার কি দরকার।
বলাখাল বাজারের ধেররা এলাকার সার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, আমি সরকারিভাবে লাইসেন্স নিয়ে সততার সাথে ব্যবসা করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যে আমি সকল কাজগপত্র প্রস্তুত করেছি সহসা অনুমোদন পেয়ে যাবো। নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় এমন বেশ কজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার ব্যবসায়ী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু কৃষি কর্মকর্তার কারণে লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীরা সার ও কীটনাশক বিক্রির সাহস পায় । এরাই স্থানীয়ভাবে অবৈধ বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ও গোপনে আঁতাত করে। কারণ, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে কৃষি অফিসের লোকজন এ কাজ করছে। আর এরাই জানে কারা বৈধ বা অবৈধ সার বিক্রেতা।
অনুমোদনহীন সার বিক্রেতাদের বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া জানান, যে সকল লোকের সার ও কীটনাশক ব্যবসার লাইসেন্স নেই তাদেরকে আইনের আওতায় অতি দ্রুত আনা হবে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এ সকল অবৈধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানার বিধান আছে, তারই আলোকে আমরা কয়েকদিনের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।