প্রতিনিধি
হাজীগঞ্ উপজেলা থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে ‘এইড ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা উধাও হয়ে গেছে। ঈদের পর থেকে কার্যালয়টির দরজায় তালা ঝুলানো। গ্রাহকরা প্রতিদিন কার্যালয়ে এসে কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কয়েকজন গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবের বই ঘেটে দেখা গেছে, এইড ফাউন্ডেশনের পূর্ণ নাম ‘আল আরাফাত ইনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’। হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারের তালুকদার ভবনের ২য় তলায় এটির কার্যালয় অবস্থিত। ২০১০ সালে হাজীগঞ্জে এটির কার্যক্রম শুরু হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে সংস্থাটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৩০/৩৫ জন নারী-পুরুষ সেখানে একত্রিত হয়েছেন। এরা সবাই উপজেলার বড়কুল (পূর্ব) ইউনিয়নের বড়কুল গ্রামের হতদরিদ্র। শাহানারা নামের একজন নারী জানান, তিনি ২০১০ সালের ১৩ মার্চ সংস্থাটির সদস্য হয়ে মাসে এক হাজার টাকা হারে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার টাকা জমা রেখেছেন। তাকে ছয় বছর পর দ্বিগুণ টাকা দেয়ার চুক্তিপত্র হয়।
শিরিনা আক্তার নামে আরেকজন জানান, তিনি ২০১২ সালে সদস্য হয়ে মাসিক ২০০ টাকা হারে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪০০ টাকা জমা রেখেছেন। এই গ্রামের মিজানুর রহমান মাসিক দুই হাজার টাকা হারে ৯৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তার হিসাব নং ১৩১৭। এ ছাড়া আরেকটি হিসাবে তিনি ২০০ টাকা মাসিক জমা রেখেছেন। ফিরোজা বেগম নামের মধ্যবয়সী এক নারী জানান, তিনি ২০০ টাকা হিসেবে ইতোমধ্যে চার হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।
এসব গ্রাহক অভিযোগ করেন, ঈদের দু’দিন আগেও ওই সংস্থার কৃষ্ণ বাবু নামের একজন তাদের কাছ থেকে মাসিক সঞ্চয়ের টাকা এনেছেন। ঈদের পর থেকে সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা আক্ষেপ করে বলেন, এখন আমরা কোথায় গেলে এর প্রতিকার পাবো।
সংস্থাটির সদস্য ও আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংস্থাটির সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তাদের মতে এসব সদস্যের কাছ থেকে সংস্থাটি কোটি টাকার মতো আমানত সংগ্রহ করেছে।
ভবনের মালিক আনিছুর রহমান তালুকদার জানান, ঈদের ছুটিতে যেয়ে সংস্থাটির লোকজন আর কার্যালয়ে আসেনি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক লোক কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছে। আমি তাদের কাছে ভাড়া ও ঋণ বাবদ ১২ লাখ টাকার মতো পাওনা আছি।
একাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মুদাফ্ফরগঞ্জ এলাকার ইব্রাহিম খলিল নামের এক ব্যক্তি সংস্থাটি পরিচালনা করতেন। তিন মাস আগে তিনি কাতার চলে গেছেন। হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মকিমাবাদ গ্রামের আজাদ হোসেন সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ ও একই গ্রামের শ্রী কৃষ্ণ নামের একজন সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা আদায় করতেন। গ্রাহকের কাছ থেকে এ তিনজনের মোবাইল ফোন নাম্বার নিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করে নাম্বারগুলা বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মমতাজ দৌলতানা এ বিষয়ে বলেন, ওই সংস্থাটি আমার আওতাধীন নয়। এটি সমবায় কার্যালয়ের অধীনে। তবে সমবায় কর্মকর্তা আলো রাণী সরকার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, এইড ফাউন্ডেশন নামের কোনো সংস্থা আমার কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নেয়নি। তারা কীভাবে এখানে কার্যক্রম চালিয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন ভালো বলতে পারবে।