সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ
হাজীগঞ্জে ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা চিকিৎসা বাণিজ্য করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। বর্তমান সময়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বেসরকারি পর্যায়ে যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এখানে সাধারণ মানুষ রোগ নির্ণয়ের সঠিক রিপোর্ট না পেলেও ডাক্তারদের কমিশন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সরকারি হাসপাতালের তুলনায় দ্বিগুণ, কার্যক্ষেত্রে তিনগুণ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে তাদের। ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নানা অভিযোগ হয়ে এলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যে কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন আর সেবা নয়, রূপ নিয়েছে বাণিজ্যে।
জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউিনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। সেখান থেকেই সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু চিকিৎসা পেয়ে এসেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু এর পরিবর্তন ঘটে ১৯৮৫ সালের পর থেকে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির চিত্র আরো পাল্টে যায়। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশাপাশি শহরে ক্লিনিক ব্যবসার ফাঁদ খুলে বসে চিকিৎসা ব্যবসায়ীরা। আর চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। শহর থেকে উপজেলা সদর পর্যায়ে, এমনকি নামকরা হাটবাজারগুলোতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ২০০০ সালের পর থেকে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তা গড়ে তুলতে শুরু করেন। সরকারি নীতিমালা ছাড়াই এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোনো বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করিয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। আর এই ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগীর মৃত্যুও ঘটছে। এরপরও হাজীগঞ্জে অজ্ঞাত কারণেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং সরকারি নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞরা দিনের পর দিন দিনের অধিকাংশ সময় এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সময় দিয়েই চলেছেন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে গড়ে তোলা হাসপাতালগুলোতেও বসে তারা চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করেন। শুধু তাই নয় হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েচিকিৎসা নিতে আসা গ্রামগঞ্জের অধিকাংশ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেন দালালরা। এ কাজটি করার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের উৎসাহিত করেন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত মার্কেটিং বা বিপণন কর্মকর্তা। একজন পাঠানো রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে অর্থ আয় করে তার শতকরা হিসাবে ৫০ ভাগ পান ডাক্তার আর ৫০ ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। আর কর্মরত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠালে রোগীর নিকট থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৩০ ভাগ কমিশন পান ডাক্তাররা। ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন পান। শুধু তাই নয় হাজীগঞ্জে কিছু কিছু ফার্মেসিতে ঔষধ কিনতে গেলে তারাও পরিচিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে গোপন সূত্রে জানা যায়, কিছু কিছু ফার্মেসী মালিক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভারতিয় ঔষধ বিক্রি করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ডাক্তারের সংখ্যা পরিসংখ্যানগতভাবে বৃদ্ধি পায়নি। প্রতি ১০ হাজার রোগীর জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র দুজন। যে কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে যে কেউ যেখানে সেখানে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলছেন। আর সাধারণ রোগীরা হচ্ছেন বিভিন্নভাবে প্রতারিত। কোনো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বা হাসপাতালের কেবলমাত্র ডাক্তারের নাম ব্যবহার করেও রিপোর্ট নির্ণয় করে দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রী ঠিকমতো সরবরাহ না করার জন্য অনেক সময় রোগীরা কম পয়সায় চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগান ডাক্তাররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ অঞ্চলের স্বনামধন্য একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল সূত্র জানান, কেবলমাত্র চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যের জন্য সরকারি হাসপাতালের তুলনায় একজন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়। কারণ সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকায় হয়ে থাকে। সেখানে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। নির্ধারিত মাসিক বেতনের পরেও কেবলমাত্র একজন ডাক্তার এসব চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে মাসে কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল ডাক্তারদের কমিশন দেওয়ার জন্য নির্ধারিত লেজার বই রয়েছে। সেখানে চিকিৎসকের নামের পরিবর্তে বিভিন্ন কোড ব্যবহার করা হয়।
শিরোনাম:
বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।