এম.সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মাণাধীন বলাখাল-বড়কুল সেতুটির নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আর সেতুটির কাজ চলছে টিমেতালে। ইতিমধ্যে কাজের নির্দিষ্ট মেয়াদ (৫৫০ দিন) শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় এ কাজ শেষ করতে আরো এক বছর বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে এ এক বছরের মধ্যেও সেতুর কাজটি পুরোপুরি শেষ না হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। যেখানে মূল সেতুর কাজ এখনও ৬০ ভাগ বাকি রয়ে গেছে সেখানে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে এখনো হাত দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু উক্ত বাজেটের মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের বরাদ্দ রয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে বলাখাল থেকে উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জনগণের চলাচলের জন্য স্থানীয় সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম উক্ত সেতুটি একনেকে অনুমোদন করিয়ে নেন। সেই আলোকে উক্ত অংশে চেইনেজে ১.৩২ মিটার দৈর্ঘ্য পিএসসি গ্রার্ডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। যার চুক্তিমূল্য ছিলো ১১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ৯শ’ ১৫ টাকা। উক্ত কাজটি এমইউ (বাঁশি) এমএএইচ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পায়। যার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ৩১/১০/২০১০ তারিখে। আর কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ ধরা হয়েছে ২১/০৫/২০১২ (৫৫০ দিন)। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উক্ত কাজ শেষ করার জন্য পুনরায় আরো ১ বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের জুন (৩৬৫ দিন) পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
এ সেতুটি নির্মিত হলে হাজীগঞ্জ তথা চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাড়সক ব্যবহারকারী চাঁদপুরের দক্ষিণ অঞ্চলের ৫০ ভাগ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। বলাখাল হয়ে রামচন্দ্রপুর, বাশারা, একতা বাজার, কামতা বাজার, গল্লাক ও সিআইপি বেড়িবাঁধ ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনায়াসে যে কোনো লোক আসা-যাওয়া করতে পারবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাকাতিয়ার উপর নির্মাণাধীন এই সেতুটির প্রতিটি অংশে দুটি করে মোট ৮টি পিলার নির্মিত হয়েছে। বাকি ২টি করে ৪টি পিলার নির্মাণ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। আর বড়কুল অংশের রামচন্দ্রপুর সীমান্তে ইতিমধ্যে পিলারের উপরে সড়কের দু’পাশ ও স্লাব নির্মাণ করতে গিয়ে গত সোমবার কম মজুরির (৩শ’ টাকা) কারণে শ্রমিকরা ঐ দিনের ঢালাইয়ে যোগদান করেও ফিরে যায়। সেদিন ঐ অংশে আর কাজ হয়নি। এমনকি সরজমিনে কাজ তদারকি করার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে সময়মতো পৌঁছেও শ্রমিক অসনতেদাষের কারণে তিনি ফিরে যান।
এ প্রতিবেদকের কথা হয় রামচন্দ্রপুর অংশের পিলার সংলগ্ন বেশ কিছু দোকানদার ও স্থানীয়দের সাথে। মূলত সড়কের এ অংশেই তৈরি হবে রামচন্দ্রপুর সীমানার অ্যাপ্রোচ সড়ক। এ সকল ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী জানান, এ অংশে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে কোনো পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
অপরদিকে উক্ত সেতুর উত্তর অংশ অর্থাৎ বলাখাল অংশে সর্বশেষ পিলারের সামনে এখনো ফসলী জমি বিদ্যমান রয়েছে। অর্থাৎ অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্যে এ অংশে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এখনো কাজে হাত দেয়নি।
এ সড়কে চলাচলকারী ও স্থানীয় বলাখাল কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থী জানান, সেতু হবে আর সেই সেতু আমরা কবে ব্যবহার করতে পারবো তার কোনো হদিস নেই। নির্মাণ সংলগ্ন অংশে বড় একটি বিল বোর্ডে নির্মাণ কাজের শেষ যে তারিখ দেখানো হয়েছে তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আবার সেতুর মূল অংশ নির্মাণের পরে কবে নাগাদ অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ হবে তাও আমাদের অজানা। মোট কথা হলো, এ সরকারের আমলে আর আমাদের দুঃখ লাঘব হলো না।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফ জামিল জানান, সড়কের মোট বাজেটের সাথে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের বাজেট ধরা হয়েছে। জমি অধিকগ্রহণের কোনো সুযোগ এখানে নেই। সেতুর প্ল্যান অনুযায়ী দু’পাড়েই আমাদের জমি রয়েছে। আরেক প্রশ্নে তিনি জানান, ইতিমধ্যে সেতুর ৬০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যে ১ বছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে তারা কাজ উঠিয়ে আনতে পারবে বলে আশা করি।