প্রতিনিধি
হাজীগঞ্জে মরিয়ম (২০) নামে দু’ সন্তানের জননীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে নিহত নারীর স্বজনরা। স্বামীর বাড়িতে বসতঘরে মরিয়মের লাশ রেখেই স্বামী মঈন গাজী (২৫), শ্বশুর লিয়াকত আলী ও শাশুড়ি তাসলিমা বেগম পালিয়ে গেছে। এরপরেই নিহত মরিয়মের ভাইয়েরা বিষয়টিকে হত্যা হিসেবে দেখছেন বলে নিহতের বড় ভাই খলিলুর রহমান জানান। এদিকে লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাবেদুল ইসলাম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের কাজীরগাঁও গাজী বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় স্বামীর ঘরে ওই নারীর মৃত্যু ঘটে। মরিয়ম উপজেলার ৬নং বড়কুল ইউনিয়নের মোল্লারডহর গ্রামের মিজি বাড়ির নেয়ামত উল্লাহর ছোট মেয়ে।
নিহত মরিয়মের বড় ভাই খলিলুর রহমান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমার বোনের শরীরের রং কালো বলে বিয়ের পর থেকে স্বামী মঈন গাজী বোনের সাথে অশান্তি করে আসছিলো। সংসারের অশান্তির বিষয়ে বেশ ক’বার এলাকায় সালিস করা হয় ও তারা বারবার ক্ষমা চেয়ে বোনকে নিয়ে আসতো। সব কষ্ট ভুলে বোনের সুখের কথা ভেবে বিয়ের সময় ৩ লাখ টাকা এবং বিয়ের বেশ ক’দিন পর আরো ২ লাখ টাকাসহ মোট ৫ লাখ টাকা ভগি্নপতি মঈনকে দেই। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আমরা ৫টি গরুসহ সংসারে ব্যবহার্য বহু জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই ভগি্নপতির মন পাওয়া যায় নি। সম্প্রতি মঈন বিদেশ যাবে বলে আমার বোনের কাছে টাকার জন্যে চাপ দেয়। বোন টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে চেপে যাওয়ার কারণে মঈন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে দু’জনের মাঝে কলহ চলে আসছিলো। সর্বশেষ বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্যে বোনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার দিনভর ঝগড়া হয় শুনেছি। পরে শুক্রবার ভোরে বোনের মৃত্যুর খবর শুনি। আমি বোন হত্যায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো। ভাই খলিলুর রহমান আর্তনাদ করে বলেন, আমার বোনের ছেলে রিয়াদ (২) ও রাশেদের (২ মাস) ভাগ্যে এখন কী হবে।
এদিকে মরিয়মের স্বামী মঈনের বড় বোন বিলকিছ বেগম জানান, তাদের দুজনের সমস্যার সমাধান করতে বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসি। দিনভর তাদের ঝগড়া থামাতে গিয়ে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ঝগড়া করার কারণে মঈন তার স্ত্রী মরিয়মকে একবার মারধরও করে। আর এ কারণে বৃহস্পতিবার সারাদিন মরিয়ম ভাত রান্না করে নি। বিকেলে আমি বাবার ঘর থেকে তাদেরকে ভাত দিয়ে আসি। যেটুকু জানি ওই ভাত তারা দু’জনে একত্রে খেয়েছে। এরপরেই মঈন দোকানের কাছে চলে যায়। রাত ১১টার দিকে মঈনের বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনতে পাই। এরপরেই মঈন আমাকে ডেকে বলে আপা এদিকে আয় তো, ঘরে কী যেনো হয়েছে। ঘরের ভেতরে দেখি বাবুরা কান্না করছে। তখন মঈন দরজা ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকেই আমাকে চিৎকার করে ডাক দেয়। আমি গিয়ে দেখি মঈন মরিয়মকে বালিশে শোয়াচ্ছে। তখন মরিয়মের শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীর অনেক ঠা-া। এরপরেই আমি তেলের মধ্যে রসুন গরম করে মরিয়মকে মালিশ করতে গিয়ে দেখি তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। বাড়িতে ডাক্তার ডেকে আনা হলে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত বলার পরেই মঈন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে মরিয়মের বড় বোন কুলসুমা জানান, গভীর রাতে আমাদের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আমার বোন নাকি ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। রাতেই রওনা দিয়ে ভোরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি বোন তার স্বামীর ঘরের বিছানায় পড়ে আছে। চুল বাঁধা রয়েছে, শরীরে কোনো দাগ নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যার চুল বাঁধা থাকে সে কী করে আত্মহত্যা করে? আমার বোনকে তারা মেরে বিছানায় ফেলে রেখে তারা মা-বাবা সকলে পালিয়েছে।’
লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের হবে। লাশ ময়না তদন্তের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাবেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।