ধর্ষককে বাঁচাতে ইউপি মেম্বারের অর্থ বাণিজ্য: হাজীগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক আটক
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষককে বাঁচাতে ধর্ষিত শিশুটির চিকিৎসা না করিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেছে ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার শওকত আলী। উল্টো নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে মামলা না করতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অভিযুক্ত মেম্বর শওকত আলী। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাবেদুল ইসলামের নির্দেশে শনিবার সকালে ধর্ষক কালু তালুকদার (৫০) কে আটক করেছে হাজীগঞ্জ থানার এসআই আবদুল মান্নান। বিকেলে নির্যাতিত শিশুটির বাবা মো. হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে। যার মামলা নং ১৩। তারিখ-২৯/৪/২০১৭ ইং। ঘটনার বিবরণে জানাযায়, গত বুধবার স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পর চকলেট দেয়ার নাম করে ঘাস কাটার জন্য শিশুটিকে মাঠে নিয় ধর্ষণ করে শিশুটির বাড়ীর পাশ^বর্তী তালুকদার বাড়ীর মৃত আয়ুব আলী তালুকদারের ছেলে কালু তালুকদার (৫০)। এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে ওই ইউনিয়নের গ্রাম্য মাতব্বর ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার শওকত আলী। নির্যাতিত শিশুটির অবস্থার অবনতি ঘটলে শনিবার সকালে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে তার মা ও ১১নং হাটিলা ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য মো. মহসিন মোল্লা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটির অবস্থা খারাপ দেখে তাকে দ্রুত চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। সকাল ৯টায় নির্যাতিত শিশুটিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। নির্যাতিত স্কুল ছাত্রীর মা সেলিনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, গত বুধবার স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পর আমাদের বাড়ীর পাশের তালুকদার বাড়ীর আমার জেঠা কালু মেয়েকে নিয়ে মাঠে ঘাস কাটতে যায়। কিছ্ক্ষুণ পর মেয়ে বাড়ীতে এসে ব্যাথায় কান্নাকাটি শুরু করে। পরে বিষয়টি আমার স্বামী হাবিবকে জানালে সে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নেয়ার সময় ইউপি মেম্বার শওকতআলী শিশুটিকে হাসপাতালে না নিতে দিয়ে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করায়। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যথায় মেয়েটির ডাক চিৎকার বেড়ে গেলে আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় মহসিন মোল্লার মাধ্যমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। পরে ডাক্তার সেখানে ভর্তি না করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেলিনা বেগম আরো জানান, আমার মেয়ে জানায়, প্রায় সময়ই চকলেট দেয়ার নাম করে আমার মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করতো কালু। আমি এই পাষন্ড কালু ও ইউপি মেম্বার শওকত আলী আমার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি না করে শালিশের নামে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। নির্যাতি শিশুটির বাবা দিন মজুর হাবিবুর রহমান জানান, আমি মেয়েটিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আমাদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার শওকত আলী আমাকে হাসপাতালে নিতে বাঁধা দিয়ে তারা স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করায়। শওকত মেম্বার ও টেলু মেম্বার ঘটনাটি এলাকায় সমাধানের জন্য আমাকে চপ দেয়। তারা বলে মামলা করলে কিছুই হবেনা। তোমার মান ইজ্জত যাবে। এ ব্যাপারে ওই গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক হোসেন প্রধানীয়া জানান, বিষয়টি আমকে কেউ জানায়নি। এখন আপনার মুখে শোনলাম। যদি ঘটনা এমন হয়ে থাকে, তাহলে খুবই দূঃজনক। অপরাধী যেই হউক যত শক্তিশালীই হউকনা কেন তার শাস্তি হওয়া উ”িত। হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শোনার পর পরই আমি এসআই আবদুল মান্নানকে আসামী ধরার নির্দেশ দিয়েছি। ধর্ষক কালু তালুকদারকে পুলিশ আটক করেছে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন নির্যাতিত শিশুটিকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহর ও আমি নিজে মেয়েটিকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। তিনি বলেন, নির্যাতিত শিশুটির শারিরিক পরীক্ষা শেষে মামলাটি দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা হবে।