হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে ১৫ মার্চ। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আর এ নির্বাচন হবে মূলত আওয়ামী লীগ ও ১৯ দলের মধ্যে। কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে একাত্ম থাকলেও হাজীগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনী কাজ করে যাচ্ছে। আর বিএনপি ও জামায়াতসহ ১৯ দল ইতিমধ্যে তাদের প্যানেল নিয়ে সরাসরি মাঠে গণসংযোগ করে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ গণসংযোগ করছে এককভাবে। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে ২টি ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে উপজেলা জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আর এ থেকে এই উপজেলায় স্পষ্টত হয়ে গেলো আওয়ামী লীগ এখানে এককভাবে নির্বাচন করছে এবং বিএনপি-জামায়াত জোটগতভাবে নির্বাচন করছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান বিপুল। তিনি এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বই প্রতীকে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আর একই পার্টি থেকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শিউলী আক্তার ফুটবল প্রতীকে গণসংযোগে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা-কর্মী আক্ষেপ করে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমরা এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে চেয়ারম্যান পদে ভোট দিচ্ছি না। আমাদের ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাঠে কাজ করছে। আর আওয়ামী লীগ থেকে এখনো আমদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। তারা যদি আমাদের ভোটের প্রয়োজন অনুভব না করে তাহলে আমরাও বিলকুল্লি খালাস।
উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জিয়াউর রহমান বিপুল জানান, আমরা বাস্তবে দেখতে চাই আমাদের (জাতীয় পার্টির) কি পরিমাণ ভোট হাজীগঞ্জে রয়েছে। তাই আমরা এবার এককভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি। আর আমরা চেয়ারম্যান পদে কাকে ভোট দেবো তা এখনো ভাবিনি। আওয়ামী লীগ এখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলহাজ্ব আঃ রশিদ মজুমদার। তাঁর মার্কা আনারস। তিনি তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এই কোরামে দলীয়ভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে নির্বাচন করছেন এক সময়ের কারা নির্যাতিত তুখোড় ছাত্রনেতা সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কলস প্রতীকে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হিটু চশমা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে এখনো ২জন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন প্রথমে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বলে মাঠে কাজ করেছেন। পরে তৃণমূলের ভোটে হেরে গিয়ে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রিটার্নিং অফিসারের নিকট তিনি সময়মতো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন না করায় তা কাগজপত্রে প্রত্যাহার হয়নি। তবে ২৫ ফেব্র�য়ারি তিনি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলাবাসীকে জানান দেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার পর্যন্ত হাজীগঞ্জের আওয়ামী লীগ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে তাদের নির্বাচনী মাঠ। আর দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনেকটাই এখন ব্যস্ত তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে।
এদিকে বিএনপি তথা ১৯ দল অনেক গোছালোভাবে মাঠে কাজ করছে। এরা জোটগতভাবেও একক প্রার্থী ঘোষণা দেয়। এতে ১৯ দলীয় জোট থেকে চেয়ারম্যান পদে কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার (দোয়াত-কলম) ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মোজাম্মেল হোসেন পরান মজুমদার (তালা) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রাবেয়া আক্তার (প্রজাপতি) কে সমর্থন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৯ দলীয় জোটের এই ৩ প্রার্থী একত্রে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন আর তাদের সাথে থাকছে স্থানীয় ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে জোটের শরীকদেরকে খুশি রাখতে বিএনপি তাদের অনেক ত্যাগী নেতাকে বলি দেয়। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মামুনুর রহমান মজুমদার, জাহাঙ্গীর আলম খান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান রানা, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এমএ নাফের শাহ, নাদিম উল্লা নাদিমসহ আরো ক�জনকে দলের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদটি জোটের শরীক জামায়াতকে দেয়া হয়। আবার বিএনপি সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরো দু�জন প্রতিদিন গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এরা হচ্ছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নাজমুল আলম চৌধুরী (মাইক) ও পৌর ছাত্রদল নেতা শাহাবুদ্দিন সাবু (টিউবওয়েল)। এই দু� প্রার্থী বিরামহীনভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।