প্রতিনিধি
গতকাল রোববার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাজীগঞ্জ ও ধেররা এলাকায় পুলিশ-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। সম্প্রতি হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীর নেতৃত্বে চাঁসক ছাত্রলীগ নেতা হান্নান গাজীর উপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। এর প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গতকাল রোববার ছাত্রলীগ হাজীগঞ্জ বাজারে মিছিল বের করলে সে মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এদিকে হাজীগঞ্জ বাজারে ছাত্রলীগের মিছিলে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ধেররা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ছাত্রলীগের একাংশ। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হলে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকজনকে আহত করে। পুরো সহিংসতা থামাতে পুলিশকে রাবার বুলেট, টিয়ার সেল ও লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। রাতে চাঁদপুর থেকে দাঙ্গা পুলিশ এনে হাজীগঞ্জ বাজারে ও ধেররা এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্য সোহাইলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বাজারে সংঘর্ষের সময় ইটের আঘাতে থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম আহত হন।
থানা পুলিশ জানায়, গত কদিন আগে হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীর নেতৃত্বে চাঁদপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হান্নান গাজীর উপর হামলা চালানো হয়। তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হান্নান গাজীর পক্ষে ছাত্রলীগের একটি অংশ গতকাল রোববার বিকেলে হাজীগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে। আর তখন ছাত্রলীগের অপর অংশ আরেকটি মিছিল বের করলে উভয়ের মধ্যে মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শুকুর আলম শুভ’র নেতৃত্বে চাঁসক ছাত্রলীগ নেতা হান্নান গাজীর উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে মিছিল বের হয়। মিছিলটি হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ ডিগ্রি কলেজ রোড থেকে শুরু করে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ পর্যন্ত আসলে পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে তাদের ব্যানারটি কেড়ে নেয়। এতে মিছিলকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ইটের আঘাতে থানার ওসিসহ আরো ক’জন আহত হন। তখন পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় হাজীগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কের দু’পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের এ অংশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে প্রতিবাদ মিছিলটি পুলিশি বাধায় প- হয়ে যাওয়ার খবরে মাগরিবের নামাজের পর পর হান্নান গাজীর বাড়ি ধেররা নামকস্থানে হান্নানের সমর্থকরা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করা হয়। এ খবরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ফের ধেররা এলাকায় আসলে অবরোধকারীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে পুরো ধেররা এলাকা ফাঁকা হয়ে যায় আর এর পরেই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধেররা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, অবরোধকারীদের ইট পাটকেল ছোড়ার কারণে একজন সিএনজি স্কুটার যাত্রী মারাত্মক আহত হয়। পুলিশ আসার পর পর অবরোধকারীরা সড়ক থেকে সটকে পড়ে। এ সময় পুলিশ নির্বিচারে ব্যবসায়ীদের উপর লাঠিচার্জ করলে মুদি ব্যবসায়ী সফিক, গ্রাম্য চিকিৎসক সুধাসহ বেশ কজন আহত হন।
হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ মনির হোসেন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় হাজীগঞ্জ বাজারে একজন ও ধেররায় বেশ কজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তার মধ্যে গুরুতর আহত সোহাইল নামের একজন পুলিশ সদস্যসহ বেশ কজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। চাঁদপুর থেকে দাঙ্গা পুলিশ এসে রাতে বাজার ও ধেররা এলাকায় রাখা হয়েছে। রাত ৯টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আমাদের বেশ কজন পুলিশ আহত হয়েছে। আর এ ঘটনায় রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়েছে। এক প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, হিসেব না করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের সেলের সংখ্যা বলা সম্ভব হচ্ছে না।