হাজীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিদ্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মামলার আসামী হচ্ছেন বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি। বিদ্যালয় ভাংচুরে অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষার্থী গত বুধবার বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সালিস বৈঠকে সরাসরি এ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপরেই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্ততি নেয়া হয়। দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের ইন্ধনে বিদ্যালয় ভাংচুরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় হতবাক এলাকার সর্বস্তরের লোকজন। প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন কেন যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান নি এজন্যে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাসিরকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যে চলতি বছরের টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২শ’ ৪৩ জন। এর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১শ’ ৪২ জন। ঝরে পড়েছে ১শ’ ১ জন। এই ঝরে পড়াদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণে ব্যর্থ হয়ে গত ১৪ নভেম্বর বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাংচুর করে বিদ্যালয়ের ক্ষতিসাধন করে। ভাংচুরকারীদেরকে শনাক্ত ও ভাংচুরের পেছনে কারা শিশু শিক্ষার্থীদেরকে উস্কে দিয়েছে এ নিয়ে এলাকায় বেশ ক’দিন ধরে প্রবাগন্ডা চলে আসছে। তারই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বিদ্যালয়ে ভাংচুরকারী শিক্ষার্থীরা ইন্ধনকারীদের নাম প্রকাশ্যে আনেন। এরপরেই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্ততি নেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিদ্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১২ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করে আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী ভাংচর করেছে এমন তালিকা এসেছে। সেই সূত্র ধরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদেরকে হাজির হতে বলে। মঙ্গলবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী হাজির করতে ব্যর্থ হলে ফের বুধবার বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত সালিস বৈঠকের বিষয় ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কতিপয় ব্যক্তির ইন্ধনে বিদ্যালয় ভাংচুর হয়েছে এমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আঃ হাদী এবং কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া।
বুধবারের সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আঃ হাদী মিয়া ও কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া। এ বিষয়ে মানিক হোসেন প্রধানীয়া মুঠোফোনে জানান, বুধবারের সালিস বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ভাংচুরের জন্যে একই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বাবুলকে দায়ী করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চায়।
স্বীকারোক্তিমূলক এক ছাত্রের ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায়, ভাংচুরের দিন বিদ্যালয় থেকে সহপাঠীরা আমাকে ফোন দেয়। বিদ্যালয়ে আসার পর বাবুল মিয়া (আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল) আমাদের বলে, তোরা দাঁড়া আমি উপর (বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ) থেকে আসি। উপর থেকে বাবুল মিয়া এসে আমাদের বলেন, তোদের ফরমফিলাপ হবে না। স্যারেরা কীভাবে করাবে ফরমফিলাপ, যদি ইউএনও স্যার অনুমোদন না করেন। তখন আমরা বলি, এখন আমরা কী করবো? উনি বলেন, অন্যান্য স্কুলে যেভাবে ভাংচুর করেছে তোরা সেভাবে কর। তোরা হামলা শুরু করে দে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
অভিভাবক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি ও অপর দুই অভিভাবক সদস্যকে ফাঁসানোর জন্যে শিক্ষার্থীদেরকে এসব কথা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমরা ভিলেজ পলিটিঙ্রে শিকার, এছাড়া আর কিছুই না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন জানান, এবারে ফরম পূরণে অধিকাংশ সুপারিশ ছিলো অভিভাবক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বাবুলের। আর এ ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে সভাপতি মহোদয়, আমার ও বিদ্যালয়ের সুনাম যাতে খাটো হয়। এমনটিই আমি মনে করি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মামলা দায়েরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মামলা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, বিদ্যালয় ভাংচুরের ঘটনা প্রধান শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান নি। এ বিষয়ে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করি। নতুন করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে ৭ দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে শোকজ করা হয়েছে।