নিজস্ব প্রতিবেদন
ভ্যাট বা মূসক রাষ্ট্রের আয়ের একটি অন্যতম প্রধান খাত। ভোক্তারা পণ্য ক্রয় করার পর রাষ্ট্রকে যে অর্থ প্রদান করেন তা ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেন। ভোক্তার দেয়া ওই অর্থকেই ভ্যাট বা মূসক বলে। ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হলেও হাজীগঞ্জের মিষ্টির দোকানী আর খাবার হোটেল মালিকরা বছরের পর বছর সেই ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন। বিভিন্ন সমিতির আড়ালে বা ওই সংগঠনকে পুঁজি করে এর নেতারা একদিকে নিজেরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন অপর দিকে সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাটের টাকা হাতিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মিষ্টি জাতীয় পণ্য বিক্রি করলে এর উপর ১৫% ভ্যাট, চাইনিজ হোটেল ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত হোটেলে ১৫% ভ্যাট এবং সাধারণ খাবার হোটেলে ৭.৫০% ভ্যাট নির্ধারণ করেছেন। যাদের ভ্যাট রেজিস্টেশন নাম্বার রয়েছে তারা ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে তা চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করবেন। আর ওই ব্যবসা করতে হলে ভ্যাট রেজিষ্টেশন বাধ্যতামূলক।
অনুসন্ধান শেষে তথ্য মিলেছে, হাজীগঞ্জের প্রথম সারির হোটেল ও মিষ্টির দোকান গুলো গড়ে প্রতিদিন নূন্যতম ১লাখ টাকা বিক্রি করেন। সে হিসেবে মাসে প্রতিটি হোটেলের বিক্রি ৩০ লাখ টাকা। ১৫% হারে ভ্যাট পরিশোধ করলে প্রতি মাসে প্রথম সারির দোকান গুলো প্রত্যেকের সাড়ে ৪ লাখ টাকা হারে ভ্যাট পরিশোধ করার কথা। এই বিক্রির হিসেব যদি অর্ধেকও হয় তাহলেও ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভ্যাট আদায় হবে। হাজীগঞ্জের কোন শিশুকেও যদি প্রশ্ন করা হয় গাউছিয়া হাইওয়ে চাইনিজ হোটেল ও মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন বিক্রি কত ? সে অবলিলায় বলে দিবে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। যদি জানতে চাওয়া হয় আল মদিনা চাইনিজ ও মিষ্টির দোকানে প্রতিদিনের বিক্রি কত? উত্তর হবে হাইওয়ে চাইনিজের কাছাকাছি। আর ওই পরিমান বিক্রি প্রতিদিন হলে মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ভ্যাট দেয়ার কথা। কিন্তু অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে ওই দুই দোকান মালিক প্রতিমাসে ভ্যাট দিচ্ছে মাত্র সাড়ে ৫হাজার টাকা করে। এ যেন ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব। সরকারি তহবিলে ভিক্ষে দিচ্ছেন।
হাজীগঞ্জ মিষ্টি দোকান ও হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদুল আলম। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম তৃপ্তি হোটেল। হাজীগঞ্জের বাসিন্দা এমন কারো কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় তৃপ্তি হোটেলের প্রতি দিনের বিক্রি কত? খুব সহজেই জবাব মিলবে গড়ে পঞ্চাশ হাজার। সে হিসেবে ওই দোকানের ভ্যাট জমা দেয়ার কথা প্রতিমাসে ২ লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু দোকান মালিক যেহেতু সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাই প্রতি মাসে তিনি ভ্যাট দিচ্ছেন মাত্র ২ হাজার ৯শ’ ১৬ টাকা। ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে উল্কা হোটেল, খাওয়া দাওয়া হোটেল, গাউছিয়া হোটেল সহ সকল হোটেলের চিত্র একই। ১হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি কেউ ভ্যাট দিচ্ছেন না। হাজীগঞ্জের ১১টি হোটেলের মালিক সমিতির মাধ্যমে মাসে ভ্যাট দিচ্ছেন মাত্র ৪৪ হাজার টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি হোটেল থেকে সমিতির নেতারা এর কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করেন। এরপর নানানভাবে ভাগ ভাটোয়ারার পর সরকারের খাতায় জমা দেন ছিঁটেফোটা মাত্র। বাকীটা বানরের পিঠা ভাগের মতো শুধুই ভাগ হয়। পকেট ভারী হয় সমিতির নেতাদের।
জানা গেছে রাজস্ব বোর্ড হোটেল ও মিষ্টির দোকানের ভ্যাট আদায়ের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছেন। চাঁদপুরের রাজস্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার নিজেই বিভিন্ন দোকান পরিদর্শন করছেন। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে হাজীগঞ্জের গাউছিয়া হাইওয়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্টকে প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকার ভ্যাট প্রদানের অঙ্গিকার নিয়েছেন। আল-মদিনা ২৫ হাজার টাকার অঙ্গীকার দিয়েছে। ওই হারে প্রতিটি হোটেলের ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চাঁদপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার মোঃ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে চাঁদপুরে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমান অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড টার্গেট নির্ধারণ করেছে ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে ভ্যাট আদায় করা তার ওপর পবিত্র দায়িত্ব। রাষ্ট্রের ওই দায়িত্ব সকলের সহযোগিতায় পালন করতে চান তিনি। তিনি জানান, জনগণ এখন অনেক সচেতন। রাষ্ট্রের উন্নয়নে সকলেই অবদান রাখছে। সকলের সহযোগিতা পেলে রাজস্ব বোর্ডের যে টার্গেট তা পুরোপুরি না হলেও এর কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
শিরোনাম:
বুধবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।