সাখাওয়াত হোসেন শামীম,হাজীগঞ্জ(চাঁদপুর) সংবাদদাতা :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্র জানায়, গত ২৭ আগষ্ট থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত অভিযুক্ত ২৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার মাঝে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় বাতিলকৃত ফরম পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১ ও ২ সেপ্টেম্বর ফরম পূরণকৃতদের স্বাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের ২৩১ জন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মাত্র ৪০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা কমান্ডার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
এ দিকে ৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ৬ জন সদস্য কমান্ডার কর্তৃক অবৈধ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য জেলা কমান্ডার এম.এ ওয়াদুধ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রনালয়ের সচিব, দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
জেলা কমান্ডার বরাবর পাঠানো প্রতিবেদন ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানাগেছে, ২৩১ জন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধার মাঝে ১১১ জন ফরম পূরণ করে যাচাই-বাছাই কমিটিতে স্বাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা কমান্ডার মাত্র ৪০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করেছেন, ৩ জনকে জেলা কমিটিতে আপিলের সুযোগ দিয়েছেন এবং ৬৮জনকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া বাকী ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধার মাঝে ২৪ জন ফরম নিয়ে জমা দেন নাই, ৩০ জন ফরম নেন নাই, ৫২ জন উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। অবশিষ্ট ১৭ জন সম্বন্ধে কেউ সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বিএম মহসিন নয়ন জানান, হাজীগঞ্জে যে ফরম ও প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, গত ১২ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে ঐ ফরম ও প্রক্রিয়া বাতিলা করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা কমান্ডার আবু তাহের ও সদস্য সচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনকে তোয়াক্কা না করে বাতিলকৃত ফরম পূরণ করে অবৈধ অর্থ বানিজ্য করেছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলা কমান্ডার মন্ত্রনালয় ছাপানো ফরম বিতরণ না করে বাতিলকৃত ফরম পূরণের মাধ্যমে অবৈধ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া করেছেন। কমান্ডারের অপকর্মের বিরুদ্ধে সকল মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে গত ১২ জুলাই মন্ত্রনালয় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয়, কমান্ড কাউন্সিল ছাপানো ১৪ পাতার ফরম বাতিল করে ২ পাতার একটি ফরম পূরণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পাঠায়।
বাতিলকৃত ফরম পূরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইতে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, আমার কাছে মন্ত্রনালয় থেকে কোন কাগজপত্র আসে না। উপজেলা কমান্ডার যে সব নথিপত্র দেন এসবের ভিত্তিতে আমাকে কাজ করতে হয়। তিনি দাবী করেন, বিধি মোতাবেক যাচাই-বাছাই ফরম পূরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহেরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ে যেয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিরোনাম:
রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।