কামরুজ্জামান টুটুল
আগামী ১৫ মার্চ ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হাজীগঞ্জের নির্বাচন। এর আগে তিনটি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এমএ মতিন বিএনপি থেকে, মরহুম তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী জাতীয় পার্টি থেকে ও অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার আওয়ামী লীগ থেকে। যেহেতু সর্বশেষ তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দখলে আছে চেয়ারম্যান আসনটি, তাই আওয়ামী লীগ চাচ্ছে এই এটি ধরে রাখতে। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই চেয়ারটি বিএনপির হাত ছাড়া রয়েছে। তাই বিএনপি মরিয়া চেয়ারটি দখলে নিতে।
হাজীগঞ্জে ভোটগ্রহণের সময় হতে আছে আর মাত্র ১০ দিন। ১৫ মার্চ এ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী দেয়া হয়েছে অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদারকে। তিনি নির্বাচন করছেন আনারস প্রতীকে। বর্তমানে তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে ইতিমধ্যে পুরস্কার পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আঃ রশিদ মজুমদারকে সমর্থন দেয়ায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো একত্রে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগের দলীয় তিন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য উপজেলা যুবলীগ মতবিনিময় সভা করেছে। যুবলীগকে দলীয় প্রার্থীদের সাথে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড এবং উপজেলা ও শহর শাখা� আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি বহাল আছে। আর এ সকল কমিটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রে কাজ করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা অতি সহজ বলে অনেক আওয়ামী ঘরানার ভোটার মনে করেন।
সর্বশেষ নির্বাচনে এ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদটি দখলে নিতে সমর্থ হয়। আর এবার চেয়ারম্যান পদসহ বাকি পদগুলো পুরোপুরি দখলে নিতে মাঠে মরিয়া হয়ে নেমেছে দলটি। তাই তারা গত ক� দিন ধরে তাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। এটা অবশ্য প্রকাশ্যের কথা। বিরোধ এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগে না থাকলেও নির্বাচনের ও দলের স্বার্থে আওয়ামী লীগের ঐক্যের বড় প্রয়োজন বলে প্রবীণ রাজনীতিবিদগণ বলতে শুরু করেছেন। তা না হলে এ উপজেলায় ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টাতেও সময় বেশিক্ষণ লাগবে না।
আওয়ামী লীগের জন্য এ মুহূর্তে সবচে� বড় সমস্যা তাদের ভোটের হিসাব। কারণ, গত নির্বাচনগুলো জাতীয় পার্টির সাথে যৌথভাবে নির্বাচনে গেলেও এবার আওয়ামী লীগকে ছেড়ে মাঠে একা কাজ করছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের এ মুহূর্তে উচিত জাতীয় পার্টিকে ডেকে অন্তত তাদের সাথে ভোটের হিসেব-নিকেশ কার্যকর করা। যেহেতু জাতীয় পার্টি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছে সেহেতু চেয়ারম্যান পদের ভোটগুলোর জন্য তাদের সাথে সমঝোতা করা উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে।
উপজেলা ও শহর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন এ রকম ক�জন আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমরা সকলে কাজ করলে আওয়ামী লীগ অতি সহজে পাস করতে পারবে। তা না হলে আমরা এখানে হারবো। তবে আমাদের উচিত যেহেতু এ চেয়ারম্যান পদটি আমাদের দখলে আছে তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো এবং এই ৩টি পদ আমাদের দখলে নেবো।
অপরদিকে বিএনপি তথা ১৯ দলীয় জোট থেকে একক প্রার্থী হিসেবে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারকে। তিনি নির্বাচন করছেন দোয়াত- কলম প্রতীকে। জোটের কারণে এখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতা মোজাম্মেল হোসেন পরানকে সমর্থন দেয়া হয়। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া আক্তার রুবী।
উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পরে ১ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হাজীগঞ্জ থেকে চেয়ারম্যান পদে আসীন হন চাঁদপুর-৫ নির্বাচনী আসনের সাবেক সাংসদ এমএ মতিন। সে সময় তিনি বিএনপির টিকেটে নির্বাচন করেন।
এবার অবশ্য বিএনপি এককভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। তাদের সাথে এ বছর রয়েছে জামায়াতসহ ১৯ দল। ১৯ দল আসলে বলা হলেও হাজীগঞ্জে মূলত বিএনপি আর জামায়াত ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এ উপজেলা বিএনপি অধ্যুষিত দাবি করে বিএনপি আশা করছে, এ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩ পদই তাদের দখলে যাচ্ছে। বিএনপির নেতারা বলছে, বিরোধী শিবিরে বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নের পরেও তারা শতভাগ আশাবাদী পাস করার।
বিএনপি এবারের নির্বাচনে একেবারে ভিন্নভাবে কাজ করছে। তারা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় জামায়াতের সকল ভোট বিএনপির ভাণ্ডারে জমা পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। ইতিমধ্যে ১৯ দল সমর্থিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একত্রে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী দাবি করেন, এ নির্বাচনে আমরা জিতবোই। সরকারের লাঠির কাছে আমরা অসহায় হলেও ব্যালটে ভোট দেবে ভোটাররা। তাছাড়া এবারে আমাদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করছে জামায়াত। আমরা তাদেরকে অনেক ছাড় দিয়ে তাদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছি ও তাদেরেক আমাদের সাথে রেখে গণসংযোগ করছি। আমাদের পাশাপাশি জামায়াত সঠিকভাবে ভোট দিলে অবশ্যই ১৯ দলীয় জোটের ৩ জন প্রার্থীর সবাই পাস করবে।