হাজীগঞ্জ:
চাঁদপুর জেলার মধ্যে হাজীগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এ উপজেলার সাথে সংযুক্ত রয়েছে রামগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদরের পূর্ব অংশ, কচুয়া ও শাহরাস্তির সীমানা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা ও সীমানা সংশ্লিষ্ট এসব এলাকার লোকজন চিকিৎসার জন্যে হাজীগঞ্জ এসে থাকে। উল্লেখিত এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৫০ বছর আগে ৩০ শয্যা দিয়ে এ হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়ে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চলছে নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে। রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্যে হাসপাতালে তেমন কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
গত বিএনপি সরকারের আমলে এ হাসপাতালটিকে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা করা হয়। এজন্য দোতলা একটি ভবন করা হয়। কিন্তু ৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্যে যে পরিমাণ লোকবল দরকার তা তো নেই-ই বরং ৩০ শয্যা হাসপাতাল পরিচালনার লোকবলও বর্তমানে নেই। নামমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এ হাসপাতালে এঙ্-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো যন্ত্রপাতি নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীরা অন্ধকারে থাকে। এ সময় রোগী ও তাদের সাথে আসা লোকজন আতঙ্কের মধ্যে থাকে। তারপরও প্রতিদিন শত শত রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে আসে।
ডাক্তাররা রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করতে দিলে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা প্যাথলজি ব্যবসায়ীদের দালালরা রোগীদের জোর করে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়। অথবা কমিশন খাওয়া ডাক্তাররা বলে দেন কোন্ প্যাথলজিতে যেতে হবে, তখন তারা ঐভাবে যায়। অথচ এসব প্যাথলজির টেস্টের সঠিকতা ও মান বলতে কিছুই নেই। হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে বসে টাকা ছাড়া কোনো রোগীকে ভালোভাবে দেখেন না বলে রোগীরা এ প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করেন।
রোগীরা বলেন, সরকারি হাসপাতালে আসি ভালো চিকিৎসার জন্যে, কিন্তু টাকা ছাড়া ডাক্তাররা কোনো রোগী দেখেন না এবং হাসপাতালের ঔষধ আমাদেরকে দেয়না ঠিকমত। মনে হয় যেনো কে কত রোগী দেখবেন এবং কে কতো টাকা আয় করবেন তা নিয়ে সবাই থাকেন ব্যসত্দ।
অনেক ডাক্তার রয়েছে তারা হাসপাতালে নামমাত্র হাজিরা দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চলে যান। সব মিলিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর ১৬৪টি পদ সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে ৭১টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এতো অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে কীভাবে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৪৩ জনসংখ্যার চিকিৎসা চলে তা বুঝা কঠিন। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মরত ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিশাল এরিয়ার মধ্যে একটি মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ পদগুলো সরকার পূরণ করে দিলে এ বৃহত্তর এলাকার মানুষের অনেক উপকার হতো। তারা যে কোনো জটিল রোগের জন্য এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারতো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তার না আসায় এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের মুমূর্ষু রোগী নিয়ে চলে যেতে হয় ঢাকা বা কুমিল্লায়। যাওয়ার পথে অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ হাসপাতালটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দ্রুত পূরণ করা হলে এ এলাকার মানুষের উপকার হবে।
তাছাড়া এক্স-রে মেশিন এবং অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে অনেক দিন হয়। নতুন করে এসবের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক লেখালেখি করেছি। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
