স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের কাপাইপকাপ মিশন মার্কেট (আমেনা সুপার মার্কেট) এর গ্যারেজ থেকে একই রাতে দু’টি সিএনজি চালিত নতুন অটোরিকশা চুরি হয়েছে। এই ঘটনার পরে ওই গ্যারেজে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর সনাক্ত এবং হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত চোর চক্র আটক হয়নি। বিপরীতে ওই চক্রটি গ্যারেজ মালিক ফরিদ আহম্মেদ খানকে অভিযুক্ত করার চেষ্টার করছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত আনুমানিক ৮টা থেকে ভোর হওয়ার পূর্বে এই ঘটনা ঘটে। চুরির ঘটনাটি পুরো দৃশ্যমান হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, কাপাইকাপ হাজীবাড়ীর মনির হোসেনের ছেলে মো. রিজন (২৫) ও একই গ্রামের মো. ইলিয়াছের ছেলে মো. মাসুদ (১৮) ঘটনার রাত ৮টার দিকে দু’টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা উল্লেখিত গ্যারেজে রেখে যান। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে চালক মাসুদ গ্যারেজে এসে দেখেন গাড়ী দু’টি গ্যারেজে নাই এবং চোর চক্র তাদের গাড়ীগুলো নিয়েগেছে। পরবর্তী সিএনজি দু’টির উভয় চালক বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানান এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে না পেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
রিজনের মালিকাধীন অটোরিকশার ইঞ্জিন নম্বর: ৮২২৪৪, সেসিস নম্বর: ০৪৫৩০, রং সবুজ। মাসুদের মালিকানাধীন অটোরিকশার ইঞ্জিন নম্বর: এজেডজেডডাব্লিউএলই ৩৬৯৮১, সেসিস নম্বর:এমডি২এ৪৫এওয়াই৩এলডাব্লিউই, রং-সবুজ।
এই বিষয়ে অভিযোগকারী রিজন বলেন, ঘটনার পরের দিন থানায় অভিযোগ করি। এই পর্যন্ত বহুবার থানায় গিয়ে কোন সমাধান পাইনি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ও স্থানীয়দের মাধ্যমে চোর সনাক্ত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে আটক করেনি। সনাক্ত হওয়া ওই চোর হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ীর আবু পাটওয়ারী ছেলে সুজন পাটওয়ারী (২৩)। চুরির ঘটনার পরেও বর্তমানে সে সিএনজি চালাচ্ছে।
রিজন আরো জানান, সে গত ১৪ মাস পূর্বে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ ও কিস্তিতে ৪লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ক্রয় করেন। একইভাবে দুই মাস পূর্বে মাসুদও ব্যাংক ঋন ও কিস্তিতে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ক্রয় করেন। তারা প্রতিদিন নিয়মিত সিএনজি চালিয়ে কিস্তির টাকা শোধ করে আসছিলেন। কিন্তু গাড়ী দু’টি চুরি হয়ে যাওয়ার পরে তারা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন।
রিজন বলেন, চুরির ঘটনার রাতে আমাদের গ্রামের আলাউদ্দিন নামে ব্যাক্তি রাতে ১০টার পরে সনাক্ত হওয়া চোর সুজনকে দেখেছেন। একই রাতে হানিফ নামে আরেক ব্যাক্তি গোয়াল ঘরে গরু দেখতে গিয়ে সুজনকে দেখতে পান। খুব দ্রুত সে চলে যাচ্ছে।
গ্যারেজ মালিক খান বাড়ীর ফরিদ খান বলেন, চুরির ঘটনার দুই সপ্তাহ পূর্বে আমি নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। চুরির ঘটনার পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি সিসিটিভির ম্যামোরিকার্ড চাঁদপুরে এনে পুরো চুরির দৃশ্য দেখি। এতে দেখাগেছে ৩জন চোর গ্যারেজে প্রবেশ করে। একজনের গায়ে গামছা আছে। চুরির সময় হচ্ছে রাত আনুমানিক ৩টা। প্রায় ১ঘন্টা সময় নিয়ে তারা দু’টি সিএনজি গ্যারেজ থেকে বের করে গেট লক করে দেয়।
তিনি আরো বলেন, সিএনজি অটোরিকশার মালিক রিজনসহ ২৩ ফেব্রুয়ারি থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পরবর্তীতে বহুবার থানায় গিয়ে কোন সহযোগিতা পাইনি। এরই মধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই চোরকে সনাক্ত করে থানায় সংবাদ দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে আটক করতে পারেনি।
ফরিদ খান আরো বলেন, চুরি হওয়া দু’টি সিএনজি অটোরিকশার মালিক এখন খুবই অসহায়। তাদের সহায়তায় আমি নিজেও এই পর্যন্ত কোন আইনী সহায়তা পাইনি। আমি চিহ্নিত এই চোর ও চক্রে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
চুরির ঘটনাটি অভিযোগ করার সময় হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর হোসেন রনি। তিনি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্বদেন এসআই সুমনকে। কিন্তু বিষয়টি অগ্রগতি হয়নি।
বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় এই বিষয়টি পুনরায় এই প্রতিনিধি হাজীগঞ্জ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদকে জানান। তিনি অভিযোগকারীর নাম জানেন এবং বিষয়টি খোঁজ নিবেন বলে জানান।
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/