হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ১ নৌকার জন্যে ১৪ মাঝির দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন নৌকার কা-ারী, কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক, কার হাতে উঠবে নৌকার দাঁড়, কেন্দ্র কার হাতে দিবেন নৌকা প্রতীক-এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। তবে প্রার্থীদের মধ্যে যার যার ক্ষমতা কিংবা লিংক আছে সেটি ধরে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ বেড়েই চলছে। প্রতীক আনার জন্য ১৪ প্রার্থীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নৌকা প্রতীক যে পাবে তার জয় নিশ্চিত বলেই নৌকা প্রতীকের জন্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে এখন চলছে প্রতীক আনার যুদ্ধ। প্রতীক আনার পরেই শুরু হবে ভোট যুদ্ধ। হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ভোট যুদ্ধ হবে আসছে ৩০ জানুয়ারি। এখানে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী ২ জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের স্বার্থে একজনই চূড়ান্তভাবে ধানের শীষ পাবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি হাজীগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্যে বর্ধিত সভার আয়োজন করে। সে সভায় সমর্থক ও প্রস্তাবকের ভিত্তিতে ৭ জন প্রার্থী তাদের নিজেদের নাম আনেন, বাকি ৫ জন নিজেরা নিজেদের নাম প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া আরো কমপক্ষে ২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে ব্যানার টানানোসহ দলীয় টিকিটের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে গত সোমবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ঢাকা থেকে কিনেছেন বলে জানা গেছে।
প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম মাহবুব-উল আলম লিপন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সৈয়দ আহম্মদ খসরু, সাবেক উপজেলা পরিষদ ও পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যাপক আবদুর রশিদ মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য রোটাঃ আহসান হাবিব অরুণ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক মুরাদ, জেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য খালেদুর রব মিঠু এবং পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক হায়দার পারভেজ সুজন রয়েছেন। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌসি আক্তার, সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আলী আশ্রাফ, জেলা মহিলা যুবলীগের সদস্য শিউলী আক্তার, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন খোকা, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মোঃ সেলিম ও হাজী আবদুল মান্নান। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তথা দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যত জাঁদরেল প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আর সমর্থনের ভিত্তিতে আনুক না কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীক যে পাবে তার পাল্লাই ভারী হবে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকরা। মূলত প্রার্থীদেরকে দুই কূলের জন্য দৌড়াতে হচ্ছে । প্রথমত নিজেদের দলীয় প্রতীক নৌকা প্রতীক আনা আর দলীয় ও দলের বাইরের ভোটারদের মন জয় করা। আবার নৌকা প্রতীক আনলেই হবে না, দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু নিকমহারাম রয়েছে। মূলত এরাই প্রকাশ্যে নৌকার জন্য ভোট চাইবে আর গোপনে দলীয় প্রার্থীকে ফেল করিয়ে সামনের বারের পৌর নির্বাচনে নিজের শক্ত অবস্থানে নেয়ার ষড়যন্ত্র করবে-এমন ধারণা করছেন দলের একনিষ্ঠ কর্মীরা। তবে সাধারণ সমর্থকরা নৌকা প্রতীক দেখেই ভোট দিবে, তারা নৌকার সাথে বেঈমানি করবে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী।
চলতি সপ্তাহে জানা যাবে কে হচ্ছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভায় নৌকার মাঝি। নতুন মুখ নাকি পুরানোই থাকছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) নানানভাবে ছবি পোস্ট করে সরগরম রাখছে মাঠ।
পাশাপাশি পৌষের প্রচ- শীতের রাতেও চায়ের দোকানে চলছে জমজমাট আড্ডা। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে চলে বাকযুদ্ধ। প্রতীক প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত এমন বাগ্বিত-া চলতেই থাকবে বলে জানান কর্মী-সমর্থকরা। তবে কর্মী-সমর্থকদের একটাই কথা, দলীয় প্রতীক যে পাবে তার পক্ষেই কাজ করবে সবাই।
এদিকে বিএনপি থেকে এখনো একক প্রার্থী হিসেবে আবদুল মান্নান খান বাচ্চুর নাম শোনা গেলেও প্রবীণ রাজনীতিবিদ হেলাল উদ্দিন মজুমদারও বিএনপি থেকে ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের ১৪জন প্রার্থী নৌকা প্রতীকে চাইলেও এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে নীরবতা পালন করতে দেখা যায়। গত পৌর নির্বাচন আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী বর্তমান মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম থাকলেও বিএনপির ধানের শীষের প্রতীক পান তৎকালীন মেয়র আবদুল মান্নান খান বাচ্চু। সেই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে উপজেলা বিএনপি নেতা হেলালউদ্দিন মজুমদার স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে মেয়র পদে আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপন নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৪৫ হাজার ৩শ’ ৪৮জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২২ হাজার ৯শ’ ৫৫জন এবং নারী ভোটার ২২ হাজার ৩শ’ ৯৩জন। আসছে ৩০ জানুয়ারী ২০২১ হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৩ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১০ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।