এম.সাখাওয়াত হোসেন মিথুন:
দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো হাজীগঞ্জ উপজেলার গ্রামাঞ্চলেও চির পরিচিত নানা প্রজাতির দেশীয় প্রাকৃতিক মাছের আকাল চলছে। এ অঞ্চলের খাল-বিল, নদ-নদীসহ মুক্ত জলাশয়গুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এ উপজেলা থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে লাল চান্দা, পাবদা, সরপুঁটি, তিতপুটি, ডানকুনো, মায়াসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির ছোট মাছ। বিলুপ্ত প্রায় মাছ ছাড়াও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে চলা পুঁটি, টেংরা, ফলই, ভেদা, শিং, মাগুর, কৈ, বেলে, মহাশৈল, গজার, বোয়াল, লাল খলিশা, বাইম, গোরকুতেসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। গ্রামাঞ্চলের ছোটখাট বাজারে এসব প্রজাতির মাছ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। চেনা মাছ হয়ে পড়েছে খুবই অচেনা অপরিচিত। বাজারগুলোতে প্রাকৃতিক মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মফস্বলের প্রধান প্রধান বাজারগুলোতে যা কিছু আমদানি হয় তা চলে যায় ভাগ্যবান বা বিত্তবানদের হাতে। সাধারণ মানুষদের কপালে এসব মাছ আর জুটছে না। দেশীয় প্রজাতির প্রায় সব প্রাকৃতিক মাছের বংশবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এসব স্থান দখল করে নিচ্ছে বিদেশী বিভিন্ন সংকর প্রজাতির মাছ। জেলার মৎস্য প্রধান এলাকাসহ বাজারে দেশীয় মাছের ব্যাপক সংকট বিরাজ করছে। এঅবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে নদ-নদী, খাল-বিলসহ মুক্ত জলাশয়গুলো প্রাকৃতিক মাছ শূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিবে। পুষ্টির উৎস হিসেবে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের দেহ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন ছোট মাছ থেকে পাওয়া যায়। জীববৈচিত্রের একটি বিরাট অংশ বেঁচে থাকত মাছকে জীবিকা করে। এসব এখন রূপকথার গল্পের মত শোনায়। নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিল, ঝিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থল ডোবা নালা সেচে মাছ ধরা, অপরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, বিদেশী আগ্রাসী বা রাক্ষুসে মাছের চাষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি পরিস্থিতি দেশীয় প্রাকৃতিক মাছ বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ।