এম.এইচ.মাহিন:
কে জানিত জীবন নিয়ে এত ভাবনায় মজতে হবে, তাহলে কি! এ হালে দিন কাটাইতাম মহেশ মাড়ির ঘাসবিলে তাসের ঘরে আড্ডা দিয়ে, সহপাঠী মিলে কাঠপুরা রোদে পুরে শালুক কুড়ে আমন ধানের খের পুরিয়ে শালুক পোড়াতাম আর দিন শেষে মতিন সাহেবের খেজুর গাছের বারটা বাজাতাম। রস আহরণে তার স্বীয় তণয়কে সঙ্গী করতাম বিপদ থেকে রক্ষা পেতে। নাম তার আবুল ।
আবুলকে গাছ তলায় রেখে সহপাঠী উ্ঠত খেজুর গাছে। চুরি করা রস এবার রান্নার আয়োজন । আজ রান্নার দায়িত্ব অর্পিত হল গাজী জামালের উপর । লাকড়ী কুড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হল কতিপয় সহপাঠীর উপর । লাকড়ী আনায় ব্যর্থ আদম রসের নাস্তার ভাগ পাবে না। কোন এক সহপাঠী লাকড়ী না পাইয়া কারো বাড়ীর কাঁচা পায়খানার মস্ত একটা শুকনো গাছ তুলে নিয়ে আসে। তবে, নাস্তার পথ্য চাউল নয় সিরাজল প্রধানের বাড়ীর লালচে গমের আটা।
এবার ভাগবাটরা , খাবার জন্য নিজ নিজ থালা। আমাদের মাঝে একজন ছিল বেশ পেটুক । সে কৌশল করে আগে থেকেই একটা মাটির বাসন নিজের কাছে রাখে। সহপাঠীদের মাঝে আপত্তি উঠল ওকে মাটির বাসনে খেতে দেওয়া হবে না। ওর জন্য স্টিলের বাসন বরাদ্দ হল। কারন ছিল, স্টিলের বাসনে গরম কিছু ঢাললে পুরো বাসনজুড়েই গরম বিরাজ করে ফলে দ্রুত খেতে যেন, তার বাধ সাধে ।কোন উপায়ই তাকে বেশি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে যায়নি । গ্রামের মানুষ প্রবাদ আকারে বলে ছেলেগুলো চোর হলেও ভদ্র । সে ভদ্রতার পরিচয় দিলাম রসের হাড়ি ফেরত দিয়ে।
এত বললাম আমাদের কথা, এবার আসি গাছির কথায় , দুপুর থেকেই গাছি তার দায়িত্ব পালনে বিমোর। কাজ করতে করতে বেলা গড়িয়ে যায়, সাঁঝের বেলায়ই খেজুর গাছের মাথায় জুলায় রসের হাড়ি।কিযে কস্ট , এতকিছু উপলদ্ধি করার পরও চুরি করে আনন্দ পেতাম। সকালবেলা খালি হাড়ি দেখে গাছি তার মাথায় হাত । গাছি যদি বাড়াবাড়ি করত, তাহলে কলাকাটা বলে অপবাদ দিতাম। কলাকাটা বললে গাছি নিজ থেকে চুপসি মেরে যেত।কলাকাটা শব্দটা ছিল গাছির দুর্বলতা।
আজ হিসাব কষে দেখি আটকে গেছি জীবনের বেড়াজালে । শুনেছি আবুল বিয়ে করেছে আবার বৌ তার চলেও গেছে, সহপাঠীর কিছু সংখ্যাক ভবঘুরে,কয়েকজন আবার বেতনহীন তালেব মাষ্টার আর একজনতো কবিরাজী পেশায় পেটই চালায়, আবার কয়েকজনতো রীতিমত সমাজসেবায় আসক্ত ।এবার শুনে এলাম গ্রামের পঞ্চায়েতে একজনের সুযোগ হয়েছে । পদের অবস্থান দেখেতো বুঝতে বাকী নেই কি হালে দিন অতিবাহিত হচ্ছে । তাই আজ বলছি———–
আমি ভাবছিলাম কি এ হালে দিন যাবেরে সুজনও নাইয়া
পার কর দু:খীনি রাধারে——————-
আজ ভাল মন্দ জায়গায় পা রাখি , শতজনের শত বয়ান শুনি নিজেকে অতীত পাপ থেকে শুচি করতে চাই। যাদের সাথে অন্যায় করেছি তারা কেউ বেঁচে নাই,সবাই ভূবন জগত ছেড়ে আপন জগতে। আমার এ অনুতাপ থেকে উপলদ্ধি করি যে,বনি আদম যে জাতি, যে কূল, বা যে ধর্মেরই হোক না কেন অন্যায় করে একটা সময় যে, আপন মনে অন্ত গহীণে অনুতপ্ত হয়। বিশেষ করে দেহ যৌবন ফুরিয়ে বার্ধক্য যখন উকি দেয় । তার নমুনা কেউ তজবি হাতে,কেউ তজবি গলে, কেউ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মানে, কেউ আবার সামাজিক সেবামূলক কাজ করে । সবকিছু মিলে আজ বলতে বাধ্য পরপারই চিরন্তন সত্য।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ