নিজস্ব প্রতিনিধি-
চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় প্রযুক্তির ব্যবহার
ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের যোগদান ।।
চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দার চৌধুরী। তিনি সভার শুরু থেকে প্রায় পুরো সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন যুগ্ম সচিব মাকসুদুল হক পাটওয়ারীসহ আরো ক’জন সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তাঁরা উন্নয়ন সভার আলোচনা শুনেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ক’টি বিষয়ে কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের সভাপ্রধানে বেলা ১২টায় উন্নয়ন সমন্বয় সভা শুরু হয়। সভা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবসহ আরো ক’জন কর্মকর্তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভায় যোগ দেন। এরপর তাঁরা উপস্থিত সকলের সাথে পরিচিত হন। পরিচয় পর্ব শেষে অতিরিক্ত সচিব চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের কাছ থেকে জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে জানতে চান। পুলিশ সুপার তখন আসন্ন দুর্গা পূজা ও পবিত্র ঈদুল আযহা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনবের লক্ষে পুলিশ প্রশাসনের নানা প্রস্তুতি ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি বলেন, চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা সবসময়ই ভালো। এখানে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহমর্মিতার ঐতিহ্য রয়েছে। সুশীল সমাজসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সব সময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করে থাকে। এ জন্যে এ জেলায় প্রশাসনিক কাজ করতে সব সময় অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যায়।
এরপর অতিরিক্ত সচিব চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতির কাছে মিডিয়ার দৃষ্টিতে চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা কেমন তা জানতে চান। প্রেসক্লাব সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম এ পর্যায়ে বলেন, চাঁদপুরের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহাবস্থান বরাবরের মতো বজায় রয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। তবে সমপ্রতি কয়েকটি অপহরণ ও খুনের ঘটনা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে চলতি মাসে সদর উপজেলার দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের বাখরপুর এলাকায় এক বখাটে ইভটিজারের মোটর সাইকেলের ধাক্কায় এক স্কুল ছাত্রী নিহত, ক’ দিন আগে ফরিদগঞ্জের চান্দ্রায় ছয় বছরের শিশু ইমনকে অপহরণ করে হত্যা এবং গত মাসে হাজীগঞ্জের এক কলেজ ছাত্র অপহরণের পর হত্যার বিষয় উল্লেখ করেন। এ তিনটি ঘটনায় প্রকৃত আসামীরা এখনো ধরা না পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিসিইউ ও আইসিইউর জন্য প্রায় দুই বছর আগে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়ে আছে অথচ সামান্য কিছু জায়গার জন্য এটি হচ্ছে না। এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য তিনি অতিরিক্ত সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে জানতে চান। জেলা প্রশাসক ও তত্ত্বাবধায়ক এ বিষয়টির বর্তমান অবস্থাসহ কিছুটা অগ্রগতির কথা জানান এবং এ বিষয়ে তাঁরা তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর অতিরিক্ত সচিব সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আবদুস সাত্তার মিয়ার কাছে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি চাঁদপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। এ সময় যুগ্ম সচিব মাকসুদুল হক পাটওয়ারী চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু আমার বাড়ি চাঁদপুরে, সে জন্য আমি চাঁদপুরের বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি হাসপাতালে ডাক্তাররা সময় মতো আসেন না এবং সময়ের আগেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এ বিষয়টি আপনাকে কঠোরভাবে দেখতে হবে। এ ছাড়া তিনি সিভিল সার্জনের উদ্দেশ্যে বলেন, আসছে ঈদ ও পূজায় দীর্ঘ ছুটি থাকবে। এ দীর্ঘ বন্ধে হাসপাতালগুলোতে অবশ্যই যেনো ডাক্তাররা থাকেন সেটি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহামেদ, ইউএনওদের পৰে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত ও ক্যাব চাঁদপুরের সভাপতি জীবন কানাই চক্রবর্তী। পৌর মেয়র তাঁর বক্তব্যে চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং চাঁদপুর পৌরসভায় তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির বিষয় তুলে ধরেন। ক্যাব সভাপতি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, হাসপাতালের অভ্যন্তরে ন্যায্য মূল্যে ঔষধের দোকানে নির্ধারিত ছাড় মূল্যে ঔষধ বিক্রি না করা এবং চাঁদপুরের যত্রতত্র মানহীন ক্লিনিক গড়ে উঠার বিষয় তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন তাঁর বক্তব্যে তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা দিক নিয়ে চাঁদপুরের সাফল্য ও অগ্রগতির সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন।
সবশেষে অতিরিক্ত সচিব তাঁর সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে যেনো কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদকের বিষয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, মাদক সর্বনাশা একটি বিষয়। পুরো দেশকে মাদক গ্রাস করে আছে। এ মাদকের কারণে অনেকে খুন হচ্ছে। এ সর্বনাশা মাদককে সকল সেক্টর থেকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। এ ছাড়া তিনি সভায় আলোচিত যেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সে সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত এবং ফলোআপ রিপোর্ট মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠাতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং ফলপ্রসু এ সভার আয়োজনের জন্যে উপস্থিত সবাই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দার চৌধুরী ও জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। সভায় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির প্রায় সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।