নিজস্ব প্রতিবেদক
হ্যাচারী ব্যবসায় ৫শ টাকা থেকে প্রায় ৫কোটি টাকার মালিক হয়েছেন চাঁদপুরের আত্মপ্রতীয় এক যুবক। হ্যাচারী পেশায় নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি বর্তমানে ৩০-৩৫জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। তার নাম মো. বিল্লাল হোসেন খান। তাকে দেখে ওই গ্রামের আশপাশের যুবকরা হ্যাচারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এছাড়া তাকে অনুসরণ করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে অনেক হ্যাচারী।
চাঁদপুর সদর উপজেলার পশ্চিম চান্দ্রা গ্রামের মো. আনোয়ার উল্লাহ খানের বড় ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন খান (৪২)-এর কৃষিজীবী বাবা যখন কৃষি কাজ করে বড় পরিবারের ঘানি টানতে টানতে কান্ত হয়ে পড়ছিলেন। ঠিক তখন থেকেই পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের জন্যে কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন বিল্লাল। ছাত্রজীবনে টিউশনি করে হাত খরচ বাদ দিয়ে ৫শ’ টাকা জমিয়েছেন অনেক কষ্টে। ছাত্রজীবনেই অন্যের একটি ছোট পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে। ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও আর শেষ করা হয় নি। পড়াশুনার ফাঁকে মৎস্য চাষের ওপর প্রশিণ নেন চাঁদপুর যুব উন্নয়ন প্রশিণ কেন্দ্র থেকে। সেখানে তাকে আন্তরিকতার সাথে হাতে কলমে হ্যাচারী পরিচালক মাহাবুবুল আলম প্রশিণ দেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে বিল্লাল সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত। দু’বোনকে প্রতিষ্ঠিত ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছেন। এক ভাই বিদেশে, সেজো ভাই মনির হোসেন খান হ্যাচারীর ম্যানেজারের দায়িত্ব পলান করছেন। আর ছোট ভাই মো. মাইনুদ্দিন খান চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্সে পড়াশুনা করছে। বর্তমানে তার ৪একর জমিতে মোট ৮টি পুকুরে দুটি হ্যাচারী আছে চালু আছে। ভবিষ্যতে ব্যবসা আরো বড় করার পরিকল্পনাও রয়েছে বিল্লালের। এ হ্যাচরীগুলোতে ৩০-৩৫জন শ্রমিক কাজ করে। এখানে কাজ করেই চলে তাদের সংসার। শ্রমিক মো. হামিদ মিয়া জানান, এখানে কাজ করে আমার ৮জনের সংসার চলে। এখানে কাজ করলে কোনো দিন বেকার থাকতে হয় না। অন্য কাজে গেলেতো মাঝে মাঝে কাজ থাকে না । তখন পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করতে হয়। তাই এখানেই কাজ করছি। অন্যকোথাও যাই না যাবোও না।
শ্রমিক কাউছার আলম জানান, এখানে আমরা প্রায় ৪০-৪৫ জন কাজ করি এবং সবাই ভালো আছি। এখানে মনোসেক্স তেলাফিয়া, রুই কাতলা সহ কার্পজাতীয় সকল মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বিল্লালের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই হ্যাচারী ব্যবসা করতে উৎসাহী হচ্ছে।
ওই এলাকার যুবক মানিক মিয়া জানান, এ ব্যবসায় শুনছি অনেক লাভ। তাই টাকা পয়সা জোগাড় করতেছি । আমিও একটা হ্যাচারী দেব। এ ব্যবসায় আসলে সফলতা নিশ্চিত বলে মনে করেন বিল্লালের ছোট ভাই হ্যাচারীর ম্যানেজার মনির হোসেন খান। মনির হোসেন খান জানান, এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পোনা বিক্রি করে থাকি। এ পেশায় অনেক লাভ । তাই যুবকদের এ পেশায় এগিয়ে আসা উচিৎ। কারণ এ পেশা যেমনী নিজেকে স্বাবলম্বী করে তেমনী অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
হ্যাচারী মালিক বিল্লাল হোসেন খান জানান, নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা ধরা দেবে। আমার এখন কোনো অভাব নেই। আমার দেখা দেখি অনেকেই এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ফরিদগঞ্জ হাজীগঞ্জ, কচুয়াসহ আরো অনেক স্থানে হ্যাচারী ব্যবসা শুরু করেছে অনেকে। শ্রম আর একনিষ্ঠতা নিজের ভাগ্য যেমন বদলে যায় রূপকথার মতো। আবার তার সাথে অনেকেরই জীবনের অবলম্বন হয়ে যায়। বিল্লাল হোসেন খান তেমনি দৃষ্টান্ত হতে পারে আমাদের কাছে।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।