চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া রোড ও মিয়াবাড়ি ঘাট এলাকার ১শ’ একর সরকারি জায়গা একশ্রেনীর ভূমিদস্যু চক্র ড্রেজার লাগিয়ে বালি ফেলে ভরাট করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। এতে করে এলাকার খাল বন্ধ হয়ে নিস্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। ভরাটকৃত জায়গার মূল্য প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের নিশি বিল্ডিং এলাকা থেকে শুরু হয়ে কোড়ালিয়া মিয়া বাড়ী ঘাট এলাকায় বিছিন্নভাবে ও নদী তীরবর্তী জেগে উঠা ছোট ছোট চর বাঁশের পাইলিং দিয়ে চক্রটি ভরাট করে প্লট তৈরী করেছে।
চক্রটি শহরের উত্তরাঞ্চলের পানি নিস্কাশনের জন্য একমাত্র খালটিও ভরাট করেছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এসব কাজে নিজেরা উপস্থিত থাকছে না। ভরাটের ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে কথা বললেও তারা মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে এ ব্যাপারে এলাকা বাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি চক্র সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগসাজসে ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত জরুরী বলে মনে করছেন।
দখলকৃত অনেক জমির পাশে পুরনো ও নতুন বাড়ী ঘরের পানি নিস্কাসন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কোড়ালিয়া ও মিয়াবাড়ি ঘাট এলাকার একমাত্র পানি নিস্কাশনের খাল এবং ব্রিজের নীচ পর্যন্ত ভূমি দস্যুরা বালি দিয়ে ভরাট করে রেখেছে। এতে পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দুষণ হচ্ছে। আবাসিক এলাকার পানি নামতে না পেরে প্রায়ই কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া নদী পাড়ের পাশে শুষ্ক মৌসুমে জেগে উঠা ছোট-ছোট চর ও খাল-ডোবা-নালা সব এ ভূমিদস্যু বালু ফেলে ভরাট করে ফেলছে। নদী পাড় থেকে ৪৫ বর্গ ফুট পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রেখে অবকাঠামো নির্মানের বিধি থাকলেও সে বিধি মানছে না ভূমি দস্যুরা। এলাকাবাসীর বাধাও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বা কোন তোয়াক্কা করছেনা অসাধু ব্যক্তিরা। তারা তাদের ইচ্ছা মত নদী পাড় দখল করে ভরাট করে বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বৃদ্ধা একাধিক অধিবাসী জানান, বিগত ৪০/৫০ বছর পূর্বে যাদের বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে ভূমিদস্যুরা ৮/১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন দলিল ক্রয় করে সে দলিলের বরাত দিয়ে ভূয়া ভাবে ও প্রতারনার মাধ্যমে নতুন দলিল প্রস্তুত করে প্রতি শতাংশ জায়গা ২লক্ষ টাকা দামে বিক্রি করছে। এতে ভরাটকতৃ ১শ’ একর জমির মূল্য দাঁড়ায় ২শ’ কোটি টাকা।
ভরাটকৃত প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা বিগত কয়েক মাস পূর্বে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জনকরা সহজ-সরল লোকজনকে ভূয়া কাগজপত্র, দলিল নামকাওস্তে ধরিয়ে দিয়ে এ নদীর পাড়ের জায়গা গুলি দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করছে এবং করার পরিকল্পনা চলছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার ভূমি অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও সদর ইউএনও শাহীনুর শাহীন খান জানায়, চাঁদপুর নদীপাড় ভরাটের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
চাঁদপুর বন্দর উপ-পরিচালক মোঃ মোবারক হোসেন জানান, নদী সিকিস্তি এলাকা বিআইডাব্লিউটিএর আওতাভূক্ত জায়গা। চাঁদপুর মেঘনা নদীর নিশি বিল্ডির্ং ও কোড়ালিয়া এলাকা ভরাট হচ্ছে, তা আমার জানা নেই। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল এ প্রতিনিধিকে জানান, চাঁদপুর মেঘনা নদীর পাড় ভরাট হচ্ছে, এ ব্যাপারে তার জানা নেই। বিগত দিনে শহরতলীতে বিভিন্ন জায়গা ভরাট হচ্ছে সংবাদ পাওয়া মাত্র কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি এবং ব্যবস্থা নিয়েছেন। মেঘনা নদীর নিশি বিল্ডিং এবং কোড়ালিয়া এলাকার নদীপাড় ভরাট হচ্ছে তা তিনি সরেজমিনে দেখে নোটিশ করবেন। নোটিশের পরও ভরাটকৃত জায়গা অপসারণ না করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
তিনি আরো জানান, নদীপাড় ভরাট করার কোন আইনগত বৈধতা নেই। নদীর পাড় সরকারি জায়গা। কারো ব্যাক্তি মালিকানা জায়গা যদি নদীতে ভেঙ্গে চলে যায়, তাও তাদের ভরাট করার কোন বিধান নেই। যা সম্পূর্ণ অপরাধ।