কোনো কিছু নির্মাণ শেষ না করে অব্যবহৃত অবস্থায় যদি ১০ বছর যাবৎ পড়ে থাকে তাহলে এটির যে কী করুণ দশা হয় তা নির্মাণাধীন চাঁদপুর পৌর অডিটোরিয়ামের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। একটি সময় এটির গুণগত মান এবং দীর্ঘস্থায়ী নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আর খোলা আকাশের নিচে যদি সেসব স্থাপনা পড়ে থাকে তাহলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটির অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যায়। যেমনটি হচ্ছে চাঁদপুর পৌর অডিটোরিয়ামের।
চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকায় জেএম সেনগুপ্ত রোডের পাশে ৫নং কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে হরদয়াল নাগের পুকুরটি ভরাট করে সেখানে চাঁদপুর পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০০৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখনো এটি নির্মাণাধীন। এরই মধ্যে পার হয়েছে দশ বছর। আর সরকার পার করেছে তিনটি। ২০১৪ সালে চতুর্থ সরকারে পা রাখলো নির্মাণাধীন এ পৌর অডিটোরিয়ামটি। চার সরকার দেখেছে, কিন্তু এখনো এটিতে প্রাণ সঞ্চার হয়নি। সে জন্য সচেতন মহলের প্রশ্ন� আর কতো সময় লাগবে পৌর অডিটোরিয়ামটিতে প্রাণ আসতে?
২০০৩ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এ পৌর অডিটোরিয়ামের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। এর আগে ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর সফরে এসে রেলওয়ে বালুর মাঠে (বর্তমান চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায়) এ পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। কিন্তু এ জায়গাটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হওয়ায় জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখানে আর পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য পরবর্তীতে কদমতলা স্কুলের সামনের পুকুরটি ভরাট করে এখানে পৌর অডিরোটিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে লক্ষ্যে ২০০৩ সালের ৪ জুলাই মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এখানে পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।
শুরুর দিকে এ অডিটোরিয়ামের ভিত্তির কাজ করে গণপূর্ত বিভাগ। নিচ থেকে ফাউন্ডেশন দিয়ে উপরে পিলার উঠানো পর্যন্ত করে গণপূর্ত বিভাগ। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমঝোতার মাধ্যমে এটি নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে চাঁদপুর পৌরসভার উপর। আর এটি নির্মাণে অর্থায়নসহ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ন্যাস্ত হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপর। দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত ধীর গতিতে কয়েক ধাপে এ অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয় এখন থেকে প্রায় ৪/৫ বছর আগে। ভবন নির্মাণ শেষ করে প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। অডিটোরিয়ামের আনুষঙ্গিক কাজ তথা রং করা, বিদ্যুৎ সংযোগ, আসন, সাউন্ড সিস্টেম ও কারুকাজসহ সব কাজই বাকি রয়েছে। ভবনটি দীর্ঘ সময় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় জানালার গ্লাস, দরজাসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম শামছুদ্দোহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অডিটোরিয়ামের বাদ বাকি কাজ করানো যাচ্ছে না। পৌরসভা থেকে বহু চেষ্টা ও যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এ খাতে অর্থ মিলছে না। তবে তিনি আশা করেন, সহসা অর্থ বরাদ্দ হয়ে যাবে আর এ বছরই বাদ বাকি কাজ শেষ করা যাবে। তিনি আরো জানান, অডিটোরিয়ামের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে আরো প্রায় ২ কোটি টাকা লাগবে। আর বর্তমানে যেটুকু কাজ হয়েছে তার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ দিকে নির্দিষ্ট সময়ে এটির নির্মাণ শেষ না হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে গেছে অনেক বেশি। কারণ, ৮/১০ বছরের ব্যবধানে নির্মাণ সামগ্রীসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম এবং লেবার খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আর এ দীর্ঘ সূত্রিতার কারণেই বিশাল অঙ্কের সরকারি অর্থের শ্রাদ্ধ হচ্ছে। যা জনগণের টাকা। তাই অনেক টাকার সরকারি এ সম্পদটিকে এভাবে আর অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে না রেখে এ বছরের মধ্যেই যেনো এটির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পৌর মেয়রের কার্যকর ভূমিকা কামনা করেছে শহরবাসী।