ফরিদগঞ্জে জিএফএল পরিচালনাধীন ফরিদগঞ্জ মেডিক্যাল সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়েই হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল প্রায় দেড় লাখ টাকা বকেয়া থাকায় এর বিদ্যুৎ লাইনও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালের ডাক্তার চলে গেছে অন্যত্র।
গত কদিন ধরে মালিকপক্ষের কেউ হাসপাতালে না এসে এখন গা ঢাকা দিয়ে আছে। বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পেতে এবং এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেয়া হবে বলে হাসপাতালের ম্যানেজার মোয়াজ্জেম হোসেন তুহিন জানিয়েছেন।
এদিকে মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার প্রায় তিন হাজার আমানতদারের ১২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে জিএফএলের পাঁচ মালিক। অন্যের টাকায় তারা গোপনে সম্পদ ক্রয় করে এখন দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন উক্ত কার্যালয়ে আমানতদারদের টাকা না পাওয়ার আর্তনাদে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কাউকে।
এদিকে জিএফএল কর্তৃপক্ষ তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য ফরিদগঞ্জের সর্ববৃহৎ আলিশান ৮তলা কবির টাওয়ার ভবনটি গতকাল রোববার মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এই ভবনেরও গত ৮ মাসের বকেয়া ভাড়া বাবদ প্রায় ৯ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। যথাসময়ে ওই ভবনের ভাড়া না পেয়ে ভবনটি ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দেয় ভবনের মালিক শাহজাহান কবির। এক পর্যায়ে জিএফএল ও কবির টাওয়ারের যৌথ চুক্তিনামা মতে গতকাল রোববার কবির টাওয়ার ভবনটি বুঝে নিয়েছে মালিক পক্ষ। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার আমানতদারের কোটি কোটি টাকা পরিশোধ না করে জিএফএলের ৫ মালিক গা ঢাকা দিয়েছে। এই ৫ মালিক হলেন যথাক্রমে আলকায়েদ হোসেন, শাহজাহান, আরজু, মোর্শেদ ও মাহাবুব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা অংকের মুনাফার লোভ দেখিয়ে জিএফএলের মালিক পক্ষ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারী পুরুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে আদায় করা টাকার অংক ১২ কোটি হলেও এ টাকার অংক আরো বেশি হবে বলে আমানতদারেরা জানিয়েছে। আদায় করা এসব টাকা দিয়ে জিএফএলের মালিকরা ব্যক্তি নামে জায়গা সম্পদ ও গাড়ি বাড়ির মালিক হয়ে যান। এক পর্যায়ে আমানতদারেরা তাদের মুনাফার টাকা দূরে থাক, আসল টাকা আদায় করতে গিয়ে জিএফএলর দেউলিয়াত্ব ফাঁস হতে থাকে। তবে বেশ কজন আমানতদার তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার দাপটে গোপনে জিএফএল থেকে তাদের পাওয়া আদায় করতে পারলেও আমানতদারদের বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় এখন হতাশ।
বেশ কজন আমানতদার বলেন, মোটা অংকের মুনাফার প্রলোভনে ফেলে হাজার হাজার আমানতদারের প্রায় ৩০/৩৫ কোটি টাকা জিএফএলের মালিক পক্ষ আত্মসাৎ করে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে আমানতদারদের সাথে মালিক পক্ষের দেন দরবার হয়েও কোনো কুলকিনারা হয়নি। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ আমানতদাররা জিএফএলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে জিএফএলের ফরিদগঞ্জ মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের ম্যানেজার মোয়াজ্জেম হোসেন তুহিন বলেন, আমানতদারদের পাওনা প্রায় ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়াও হাসপাতালের ২৬ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বকেয়া বেতন রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। মালিক পক্ষের লোকজন এখন ওইসব টাকা না দিয়ে উধাও হয়ে আছে। জিএফএলের মালিক পক্ষের লোকজনের মোবাইল বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।