১৪ বছরেও জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুর টোল প্রত্যাহার না করায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। টোল প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েক দফায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া পার্লামেন্টে দাবি তোলা সত্ত্বেও অজানা কারণে টোল প্রত্যাহার হচ্ছে না। অথচ সেতু নির্মাণে ব্যয়ের দ্বিগুণ অর্থ ইতোমধ্যে আদায় করেছে সরকার। ২০১৮-১৯ থেকে তিন বছরের জন্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। যা আগামী জুনের আগেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে বলে সড়ক সূত্রে জানা গেছে। আর তাই ফুঁসে উঠছে পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। মনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
চাঁদপুর সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৪ সালে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয় চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ। যার নামকরণ করা হয় ‘চাঁদপুর সেত’ু। এ সেতুটি এখন চাঁদপুরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহান চলাচল করে। গত ১৪ বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকায় আগামী তিন বছরের জন্যে ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে যার সকল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। দীর্ঘ ১৪ বছরে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতু থেকে সরকার টোল আদায় বন্ধ না করা ফুঁসে উঠছে মানুষ। ইতোমধ্যে টোল প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও সরকার ভ্রূক্ষেপ করছে না। যা প্রভাব ফেলতে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে। আগামী অর্থ বছরে যেন আর সেতুটির টোল আদায় করা না হয় এমনটাই দাবি সাধারণ মানুষের।
ফরিদগঞ্জের চরবড়ালী গ্রামের সোহেল হোসেন রিপন, বাগাদী এলাকার গোলাম সরোয়ার, এমরান হোসেনসহ আরো অনেকেই জানান, মানুষের মঙ্গলের জন্যে সরকার এ সেতু নির্মাণ করলেও আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। সরকার জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্তত এ সেতুটির টোল প্রত্যাহার করে নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাইসাইকেল এবং মোটরসাইকেল বাদে যে কোনো যানবাহনে সেতু পার হতে হলে প্রতিবার গুণতে হয় বিভিন্ন অংকের টাকা। এর মধ্যে ট্রেইলর ২৫০, হেভি ট্রাক ১৭০, মিডিয়াম ট্রাক ১০০, বড় বাস ৯০, মিনি ট্রাক ৭৫, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ৬০, মিনিবাস ৫০, মাইক্রোবাস ৪০, ফোর হুইল বাহিত যানবাহন ৪০, সিডানকার ২৫, ৩-৪ চাকার মোটরযান ১০ টাকা হারে ইজারাদারকে টোল হিসেবে দিতে হয়। বিভিন্ন সময়ে এ হারের চেয়ে অধিক টাকা আদায় করার অভিযোগ করেছে অনেক চালক। এমন কি ঈদ মৌসুমে প্রতি গরু পারাপার করা হলে ৫ টাকা করে আদায় করা হয়।
আবু মুছলেহ উদ্দীন, রাশেদ গাজী, ছোবহান মিজিসহ একাধিক চালক আক্ষেপ করে বলেন, আর কত? একটা অটোতে যাত্রী উঠুক আর না উঠুক তাদেরকে প্রতিবার ১০ টাকা করে দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ব্রিজের গোড়ায় যেতে দেয় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টোলঘর অতিক্রম করলেই টাকা না দেয়ার উপায় থাকে না। ভবিষ্যতে যেন সেতুটি টোলমুক্ত রাখা হয় এমনটাই দাবি তাদের।
এদিকে গত বছর ডিসেম্বর মাসে চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের টোলঘর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আজো তা বাস্তবায়ন করা হয় নি। যে কারণে ব্রিজের শহর লাগোয়া নির্বাচন অফিস, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এমনকি পৌরসভার বিশুদ্ধ পানি শোধানাগারের কাছে কোনো যান যেতে হলে টোল দিয়ে যেতে হয়। বিষয়টি দুঃখজনক বলে জানান ওই এলাকার সচেতন মহল।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার জানান, সেতুটি দিয়েই ফরিদগঞ্জ-রায়পুর- লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চেলের মানুষ চলাচল করে। এতো বছর সেতুর টোল আদায় করায় মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুর-৪ আসনের সাংসদ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া টোল প্রত্যাহারের বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করেছেন। জেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় উপস্থাপন করেছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বউদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ করলেও টোল আদায় বন্ধ হয়নি। প্রয়োজনে আগামী ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর চাঁদপুর সফরে আসলে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে টোল প্রত্যাহারের দাবি উত্থাপন করা হবে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন চার বছর ধরে একই ব্যক্তি টেন্ডার ড্রপ করে। আর কোনো ব্যক্তি টেন্ডার ড্রপ করে না। একই ব্যক্তি বিভিন্ন লাইসেন্সের মাধ্যমে সেতুটি ইজারা নিয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ২ কোটি ৩০ লাখ টাকায় মেসার্স এম আই ট্রেডিং সেতুটি ইজারা পায়। প্রতি বছর সেতুটির জন্যে ৫-৬ বার টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। যাই হোক, সর্বোপরি এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়-টোল আদায় করবে কি করবে না।