চাঁদপুরে ভিজিটিং কার্ড যখন প্রতারণার ফাঁদ, একাই ১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে রোগী দেখছে ডাঃ ইফতেখার উল আলম তিনি একজন চিকিৎসক, অথচ ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফ্যান্টুনে বহন করছেন জটিল ও কঠিন ১৪টি রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি। রঙচকে ভিজিটিং কার্ডে এইসব বাহারি বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি দেখে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাধারণ রোগীরা আকৃষ্ট হলেও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতনরা। তবে এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই অদৃশ্য ক্ষমতার হুমকি-ধমকি দিয়ে থামিয়ে দেন কৌতূহলী রোগীর প্রশ্ন। ১৪টি ডিগ্রীর কাগজপত্র দেখাতে না পারলেও চাঁদপুরে দীর্ঘ সময় ধরে চাঁদপুরে একাধিক প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখছেন ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম। তার ভিজিটিং কার্ডে মার্ক করে লেখা রয়েছে- মেডিসিন, বক্ষব্যাধী, শ্বাসকষ্ট, উচ্চরক্তচাপ, কামজ্বর, কিডনী, গ্যাস্টোলিভার, পরিপাকতন্ত্র, ব্রেণ, প্যারালাসিস, ডায়াবেটিক, বাতব্যথা, চর্ম-যৌন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। এই ১৪টি ডিগ্রি আদৌ সঠিক, নাকি প্রতারণার ফাঁদ তা জানতে চাঁদপুর সিভিল সার্জন ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর স্মরণাপন্য হন একজন ভুক্তভোগী। এসময় ১৪টি জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রীর কথা শুনে চমকে যান খোদ জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, এই নামে চাঁদপুরের কোন চিকিৎসকে আমি চিনি না। একজন চিকিৎসক এতোগুলো রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রিধারী হওয়াটা খুবই কঠিন বিষয়। এতোগুলো ডিগ্রীর বৈধ কাগজপত্র না থাকলে তিনি এগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। তবে সত্যিই যদি তার এতসব ডিগ্রী থেকে থাকে তবে ভিন্ন কথা। বিষয়টি কৌতূহলের সৃষ্টি হওয়ায় এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামেন স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। চাঁদপুর শহরের আল করিম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঠিকানা সম্বলিত একটি ভিজিটিং কার্ডে দেয়া চিকিৎসকের নাম্বারে রোগী সেজে ফোন করা হয়। অপরপ্রান্ত থেকে চিকিৎসক বলেন ‘আমি চেম্বারে আছি আসেন’। এরপর প্রতিবেদক ভেতরে গেলে দেখেন ফোন রিসিভ করে কথা বলা লোকটি আসলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা। দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, কার্ডে দেয়া চিকিৎসকের ফোন নাম্বারটা তার হাতে থাকে। রোগী আসলে আমরা স্যারকে ফোন করি, তখন স্যার আসেন। এরপর ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলমের ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন করলে তিনি রোগী কি না নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ছুটে আসেন। এরপর গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিয়ে তার ১৪টি বিশেষজ্ঞ ডিগ্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সাথে সাথে তিনি রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। গণমাধ্যমকর্মী হয়ে তার চেম্বারে কেন ঠুকেছেন এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখিত ১৪টি বিষয়েই তার উচ্চতর ডিগ্রী রয়েছে। যারর সকল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। গগণমাধ্যমকর্মীদের কিছু জানার থাকলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানকার অফিস কর্মকর্তা সেলিম সাহেবের কাছে কাগজপত্র সব জমা দেয়া আছে বলে জানান তিনি।এক পর্যায়ে তার কাছে তথ্য জানতে চাওয়ায় অধিকার কে দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের সাথে চড়াও হন এবং চরম দুর্ব্যাহার করেন। এরপর সঠিক তথ্য জানতে প্রতিবেদক পূনরায় ছুটে যান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে কথা হয় অত্র কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সেলিম সাহেবের সাথে। তিনি বলেন, ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম সাহেবের ১৪টি ডিগ্রীর কোন কাগজপত্র আমাদের কাছে নেই। এই নামে কাউকে আমি চিনেন না। প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখা কোন চিকিৎসক আমাদের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কাগজপত্র বা সার্টিফিকেট জমা দেন না। তারা সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষের কাছেই তাদের কাগজপত্র জমা দেন। তবে কেউ যদি কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তবে সেটি তারা তদন্ত করে দেখেন। এ বিষয়ে পূনরায় সবশেষ কথা হয়, চাঁদপুর সিভিল সার্জন ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আমি এই ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম নামে কোন চিকিৎসককে চিনি না। তিনি কি সরকারি না বেসরকারি চিকিৎসক সেটিও জানি না। তার কোন কাগজপত্র আমাদের কাছে জমা দেননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ১৪টি ডিগ্রি সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতারণার প্রমান পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা কিংবা মফস্বল শহরগুলোতে অনেক চিকিৎসকই প্রেসক্রিপশন ও ভিজিটিং কার্ডে বিচিত্র সব ডিগ্রি লিখে থাকেন। যার মধ্যে পিজিটি, বিএইচএস, এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি’র মতো বিভিন্ন ডিগ্রি ও ট্রেনিং কোর্সও রয়েছে। এসব ডিগ্রি ও কোর্সকে প্রতারণামূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব ডিগ্রি কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা বিএমডিসি স্বীকৃত নয়। এর ধরনের ভুয়া ডিগ্রি রোধে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল বিএমডিসি থেকে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়ে, কোনও কোনও নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে পিজিটি, বিএইচএস, এফসিপিএস (পার্ট-১), (পার্ট-২), এমডি (ইনকোর্স) (পার্ট-১)-(পার্ট-২), (থিসিস পর্ব), (লাস্ট পার্ট), কোর্স কমপ্লিটেড (সিসি), এম (ইনকোর্স) (পার্ট-১)-(পার্ট-২), (থিসিস পর্ব) (লাস্ট পার্ট), কোর্স কমপ্লিটেড (সিসি) ইত্যাদি এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ফেলোশিপ এবং ট্রেনিংসমূহ যেমন এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি ইত্যাদি উল্লেখ করছেন, যা কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা নয় এবং বিএমডিসি থেকে স্বীকৃত নয়। উল্লেখ্য : চাঁদপুরে ভুয়া ডিগ্রি কিংবা ভুয়া ডাক্তার সনাক্তকরণে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। যার ফলে কে আসল বা কে নকল সেটি জানার কোন সুযোগ না থাকায় সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি এমন চিকিৎসকদের কারনে চাঁপুরের অনেক সুনামধন্য চিকিৎসকের অর্জনগুলো ম্লান হচ্ছে। কিছুদিন আগে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে শেখ মোঃ সাইফুল ইসলাম নামে একজন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষ
শিরোনাম:
বুধবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
- হোম
- /
- চাঁদপুর সদর
- /
- ১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে রোগী দেখছে ডাঃ ইফতেখার উল আলম
আরও সংবাদ
বন্যা দুর্গতদের মাঝে জেলা প্রশাসকের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
শাহরাস্তি (চাঁদপুর): চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন... বিস্তারিত
ফেইক নিউজ! পাঠকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ।
অনলাইন চাঁদপুর নিউজ যা www.chandpurnews.com এবং facebook.com/onlinechandpurnews এই দুটি লিংক হতে প্রচারিত হয়। যেখানে ফেসবুক এ... বিস্তারিত
শ্রমজীবীদের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ করলেন চেয়ারম্যান…
সারাদেশ জুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাবুরহাটের মতলব রোড ও চাঁদপুর... বিস্তারিত
ফরিদগঞ্জে কুকুর বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন অটোচালক
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের দেয়ালে ধাক্কা লেগে... বিস্তারিত
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।