বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ শুরু করেছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করার দাবিতে বিএনপি জোটের এটি ষষ্ঠ দফা অবরোধ কর্মসূচি। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে মহানগর, জেলা-উপজেলা ও থানা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। বিএনপিপ্রধান গতকালও তাঁর বাসভবনে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলীয় জোট প্রথম দফায় ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৭১ ঘণ্টা, এরপর ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩১ ঘণ্টা, তৃতীয় দফায় ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ঘণ্টা, চতুর্থ দফায় ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ পঞ্চম দফায় ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয়।
গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। দলের নেতারা বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি একটু শিথিল করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দিয়ে লোকজনকে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে বলেন। জামায়াত-শিবির এ সুযোগে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে আশঙ্কায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ওই দিন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। সরকার দূরপাল্লার পরিবহনব্যবস্থা কৌশলে বন্ধ করে দিয়ে ওই কর্মসূচি ব্যর্থ করে দেয়। বাসা থেকে বের হতে না পেরে খালেদা জিয়া পরের দিনও মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। কিন্তু এদিনও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি বিরোধী জোটের পক্ষে।
গত চার দিন ধরে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার ‘ফিরোজা’ নামের বাসভবনের সামনে ছয় স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাসার সামনের রাস্তার দুই পাশে আগে থেকেই বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। পরে বালুভর্তি ট্রাক রেখে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। গতকালও বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার জন্যই এ অবস্থা।
এর মধ্যেই সোমবার রাতে গুলশানের বাসভবনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এবং গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা সোয়া এক ঘণ্টার মতো বৈঠক করেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে মজিনার বৈঠকের সময় বিএনপির অন্যদের মধ্যে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা কোনো ব্রিফিং করেননি।
গত সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার একতরফাভাবে নির্বাচন করার পথে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় ১৮ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারির একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে রাজপথ, রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে।
নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল : এদিকে গতকাল সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সরকারের দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আজগর মাতাব্বর এক বিবৃতিতে জানান, পল্টন, কদমতলী, রমনা, পল্লবী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, মুগদা, বাড্ডা, ডেমরা, খিলগাঁও, মিরপুর, দারুসসালাম, কোতোয়ালি, বংশাল, সবুজবাগ, মিরপুর, রূপনগর, খিলক্ষেত, লালবাগ, চকবাজার, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, ভাটারা, গেণ্ডারিয়া, মোহাম্মদপুর, বনানী, দক্ষিণ খান, উত্তর খান, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, বিমানবন্দর, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
রাজধানীতে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা : এদিকে অবরোধের আগের দিন গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মৌচাক মোড় এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ ও পথচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের বোমার আঘাতে কামরুজ্জামান, ইব্রাহিম ও শহিদুল ইসলাম নামে তিন পুলিশ কনস্টেবল এবং মোফাজ্জল হোসেন (৪০) ও শফিকুল ইসলাম (২০) নামে দুই পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত তিন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনস হাসপাতালে এবং দুই পথচারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত তিনজন বিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে তৃষা নামে এক নারী আছেন বলে জানা গেছে। এদিকে গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর পুরান ঢাকা ও উত্তরাসহ চারটি স্থানে ঝটিকা মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। সকালে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় দুই দফায় বোমাবাজি হলেও পুলিশ কিছুই জানে না বলে দাবি করছে।
শিরোনাম:
শনিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৩ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।