প্রতিনিধি =
প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রতিবাদে গত ২৫ নভেম্বর রাতে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে রাজপথ রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। যে কারণে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরও ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়। আর এই প্রস্তুতি গ্রহণ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি অবরোধ সফল করার লক্ষে রাতেই ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাদের স্ব-স্ব দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন স্পটে উপস্থিত হয়ে কমূসূচি সফল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশনা মোতাবেক তারা যথাযথ স্থানে উপস্থিত বা সমাবেত হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে ৮টি সংসদ নির্বাচনেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। এ নির্বাচনগুলোর পূর্বে দেশের জনগণ দেখেছে, শাসকদল নির্বাচন আসলে আর ক্ষমতা ছাড়তে চাননা। তখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য তাঁরা আন্দোলন সংগ্রাম আর জীবন্ত মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। অর্থাৎ এদেশের যে সকল রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আর চেয়ার ছাড়তে চাননা। যার ফলে বিরোধী দলীয় জোট লংমার্চ, হরতাল, অবরোধ। আর অসহযোগ আন্দোলন দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়পার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। আর আন্দোলনের ফলে বিরোধী দলের দাবি মানাতে বাধ্য হন সরকারি দল।
যার ফলে এদেশের অশিক্ষিত জনগণ থেকে শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত অথবা ১ থেকে ৫ বছরের শিশুরাও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থের কর্মসূচি হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ নামের আন্দোলনগুলোর সম্পর্কে অবহিত বা জানা রয়েছে।
সাধারণত এদেশের জনগণ জানে রাজপথ, নৌ-পথ, রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির আওতায় কী কী রয়েছে। বিরোধী দলীয় জোট রাজপথ অবরোধের নামে বাসস্ট্যাণ্ডে, লঞ্চঘাটে এবং রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাগুলোতে অবস্থান নিয়ে সেখানে তারা তাদের সভা সমাবেশ করবে। আর এ স্থান থেকে ছেড়ে যাওয়া বা দূর থেকে আসা কোনো যানবাহন যেনো স্টেশনগুলোতে অবস্থান নিতে না পারে। আবার অন্যস্থান থেকে আসা যানবাহন যেনো এখানে ঢুকতে না পারে। আর হরতাল নামক কমূসূচি দেওয়া হলে সকল পরিবহন বা যান চলাচল বন্ধ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। দলীয় কর্মীরা পিকেটিং করবে হরতালের সমর্থনে মিছিল করবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু গতকাল বিরোধী দল বা ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কমূসূচির নামে ১ম দিন যেভাবে অতিবাহিত করেছে এটি অবরোধ কর্মসূচি পরিবর্তে হরতাল কর্মসূচি পরিণত হয়েছে।
গতকাল ১৮ দলীয় জোট চাঁদপুর শহরে অবরোধের নামে একের পর এক খণ্ড খণ্ড মিছিল আর পিকেটিং করে। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। আবার জোর করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সার্টার বন্ধ করে দেয়া সড়কের দু’পাশে বাসা-বাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা এবং ভাংচুরের মাধ্যমে পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা করা। অথচ যারা বিরোধী দলীয় জোটের কর্মসূচি সংবাদপত্র বা ইলেকট্রিক মিডিয়ায় পরিবেশন করে দেশ বিদেশের কাছে তুলে ধরবেন তাদের চলাচলের মোটর সাইকেলটিও ভেঙ্গে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া। সংবাদ কর্মীদের উপর হামলা করে তাদের অঙ্গ ভেঙ্গে দেয়া, এটিই কী অবরোধের কর্মসূচি ? অবরোধের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে বন্ধ করে দেয়া আর সংবাদকর্মীদের উপর হামলা করে তাদের হাসপাতালে নেয়া জীবনে পঙ্গু করে দেয়া কী অবরোধের মূল টার্গেট বা কর্মসূচি ? অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রেল স্টেশন অবস্থান নেয়া অবশ্য তাদের নৈতিক অধিকার রয়েছে।
কিন্তু রেল লাইনের লাইনউপড়ে ফেলা, জনগণের জীবন হানি করা কী অবরোধের মূল লক্ষ্য ? অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সাধারণত এদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাট খোলা থাকে। কারণ অবরোধে এগুলো আওতার বাইরে থাকে। কিন্তু গতকাল অবরোধ চলাকালে মিছিল থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাটের উপর যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে, তা কী ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের আওতায় পড়ে ?
কিন্তু এটি সত্য যে, সরকার পরিবর্তনে বিরোধী দলীয় জোট যেকোনো কর্মসূচি দিতে পারে বা দেয়ার অধিকার রয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নে তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে তা বুঝিয়ে করতে হবে। এটা স্বাভাকি। আমরা জানি, অবরোধ অর্থাৎ যারা নৌপথ, রাজপথ এবং সড়কপথে চলাচল করে এরাতো জনগণ। এদের রায়েই নির্বাচিত হবেন কোনো এক পক্ষ। আবার যারা ব্যবসায়ী এরাওতো সরকার ও বিরোধী জোটের সমর্থক। যদি বিরোধী জোটের কোনো ব্যবসায়ী এতে বিরোধী জোটের কর্মী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তিনি কী করবেন ?
সর্বোপরি সরকার বিরোধী কর্মসূচি পালনে বাস্তবায়নে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর শান্তির নীড়। এটিই দেশবাসীর জানে। আর যারা ১৮ দলীয় জোটের চাঁদপুরের দায়িত্ব পালন করছেন তারা চাঁদপুরের সন্তান। যারা ব্যবসায়ী, সড়কের দু’পাশে বাসা-বাড়িতে বসবাস করেন, যারা সংবাদপত্র অফিসে কর্মরত বা সংবাদ কর্মী তারাও এই শহরের জনগণ। ছোট্ট এ চাঁদপুরে সকলেই সকলের চেনা। সকলেই কোনো না কোনো ভাবেই কারো স্বজন। এক কথায় সরকারের বিরুদ্ধে বা সরকার পতনে আন্দোলন কর্মসূচি বিরোধী দলীয় জোট কঠোর হবে। কিন্তু সেই কর্মসূচির সাথে যা যা সংশ্লিষ্ট তা পালন করবে বিরোধী দলীয় জোটের কাজ বা বাস্তবায়ন। আর কর্মসূচির বাইরে অন্য কোনো কারণে প্রতিহিংসার রাজনীতি বা প্রতিহিংসামূলক গর্হিত কাজ করলে জনগণ ফুঁসে উঠবে। বিরোধী জোটের কর্মসূচি সফল না হয়ে বিফল হলে কিছু করার থাকবে না। তাই সচেতন বা চোখ নাক কান খোলা রেখে চাঁদপুরের বিরোধী দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ কর্মসূচি পালন করবে এটাই প্রত্যাশা।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।