প্রতিনিধি
চাঁদপুর জেলা ও আশেপাশের জেলাগুলোর একমাত্র উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র শহরের আড়াইশ’ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। এ জেলার ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর অনেক উপজেলা ও ইউনিয়নের চরাঞ্চল এলাকা রয়েছে। এসব এলাকার জনসাধারণকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়। অবশ্য এ জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো জরুরি কোনো রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য রাজধানীতে নদীপথে দ্রুত নেয়ার জন্য একটি পরিবহন।
দাবিটি নিরবে পূরণ হলেও দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কেন্দ্র জেলা সিভিল সার্জন অফিস কার্যালয়ের সম্মুখে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্পীডবোটটি পড়ে আছে। এটি এখন এমন এক অবস্থায় পরিণত হয়েছে রোদে, জলে বৃষ্টিতে ভিজে পশুপাখির আবর্জনায় ডাস্টবিণে পরিণত হয়েছে। অথচ এ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চোখে পড়লেও এটির বিষয়ে কোনো সমাধান আদৌ হয়নি। আর একের পর এক চরাঞ্চলের জনগণ ও এ জেলা শহর থেকে নদীপথে দ্রুত ঢাকা পেঁৗঁছানোর এ পরিবহনটিতে সেবা নেয়ার ভাগ্য কোনো রোগীর হয়নি।
জানা যায়, ২০০৮ সালে জরুরি রোগী বহনের একমাত্র সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সরকারিভাবে এ জেলাবাসীর চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীদের নৌপথে চলাচলের জন্য দেয়া হয়। ওই বছরই জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে এটি অফিসের সম্মুখে রাখা হয়। যেদিন স্থানান্তর করা হয়, সেদিন এটি চালিয়ে এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রশিক্ষণসহ সবকিছু বুঝেও দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কাগজের লেখালেখি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এটি যে স্থানে রাখা হয়েছে সেই স্থানেই পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হচ্ছে। অবহেলায় অযতেœ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেখলে এমন মনে হবে এটি কোনো ডকইয়ার্ডে ফেলে রাখা ভাঙ্গাচুরা লোহা-লক্কড় এমন একটি পরিবহন। এ সম্পদটি সত্যিই বিরল।
এটি আনা হয়েছিলো চরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে জরুরি রোগী আনা নেয়ার জন্য। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি স্টলমেন্টের পর থেকেই আজ পর্যন্ত এমন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে যে, ঝড়-বৃষ্টি রোদে এটির ওপর পড়ে গেছে শ্যাওলা। গাছের পাতা, পাখির মল-বিষ্ঠা পড়ে এটি এমন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সরকারি এ মূল্যবান সম্পদটি নষ্ট হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। অচিরেই এটি পরিণত হবে ফেলে দেয়া লোহা-লক্কড়ের জঞ্জাল হিসেবে। এরপর চোরের দল এটির ভেতরের অংশ হয়তো খুলে খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেবে কোনো অজানা স্থানে। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত এ স্পীডবোটটি আনা হয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। এটি চালানোর জন্য চালককে কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও সে সময় অনেকটা জোর করেই চাঁদপুর সদর হাসপাতালকে গছিয়ে দেয়া হয়। প্রথম দিন ইনস্টলমেন্টের সময় চালক না থাকায় একজন স্পীডবোটের চালককে দিয়ে এটি পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় দেখা যায় যে, এটির এতটাই স্পীড যে ওই চালক রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে। স্পীডবোটটির আরো সমস্যা এটি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ লিটার অকটেন খরচ হয়।
চাঁদপুর থেকে ঢাকা রোগী নিয়ে এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা। তিনি আরো জানান, এরপর মন্ত্রণালয়ের অনেক ফাইল চালাচালি সত্ত্বেও এটি চালানোর জন্য কোন চালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বরং ক’বার মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শক টিম এসে এটি দেখে গেছে। কিন্তু চালক পদ সৃষ্টি হয়নি। এটির জন্য সরকারি কোনো তেলের বরাদ্দ দেয়াও হয়নি। সরকারি এ মূল্যবান সম্পদটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং এটি প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো জরুরি। না হলে এটি ‘সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল’ প্রবাদে পরিণত হবে অচিরেই। আর জেলার চরাঞ্চলের বা জেলা শহরের নাগরিকরা হয়তোবা নিজ দেশের সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্রয়ে অত্যাধুনিক এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী হিসেবে যাবার ভাগ্য জুটবে না।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।