দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা চালু করতে যাচ্ছে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। আগামী মাসে এ সেবা চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে ৩০০ টাকায় গ্রাহকদের শতাধিক চ্যানেল দেখার সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গেছে।
বেক্সিমকো সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে একটি প্যাকেজের আওতায় সেবা চালু করা হবে। প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা। এ সেবার আওতায় গ্রাহক মোট ১০৫টি চ্যানেল দেখতে পারবেন। এর মধ্যে পে চ্যানেল থাকছে ন্যূনতম ২৫টি। ডিটিএইচ সেবা নিতে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কিনতে ব্যয় হতে পারে ৬ হাজার টাকা। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে সেটটপ বক্স (এসটিবি), লো নয়েজ ব্লক ডাউনকনভার্টার (এলএনবি) ও ডিশ। এর বাইরে গ্রাহককে সংগ্রহ করতে হবে কেবল। যন্ত্রাংশের জন্য কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে বেক্সিমকো।
এ প্রসঙ্গে বেক্সিমকোর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগামী মাসে বাণিজ্যিক পরীক্ষণের ভিত্তিতে সেবাটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে বাংলা নববর্ষের আগে এটি চালু করা হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিপণনের বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে যন্ত্রাংশ সংগ্রহে কিস্তির সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ডিটিএইচের মাধ্যমে কেবল অপারেটরের সংযোগ ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখা সম্ভব। সেটটপ বক্স, এলএনবি ও ক্ষুদ্রাকৃতির একটি অ্যান্টেনার সমন্বয়ে সরাসরি বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে পাবেন গ্রাহকরা। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে চ্যানেলগুলোর ছবি ও শব্দ আসে কেবল সংযোগের চেয়ে দ্রুত। এছাড়া সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ডাউনলিংকের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিটি চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান থাকে একই রকম।
ডিটিএইচ সেবা চালু করতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়। বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও বায়ার মিডিয়া লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য মন্ত্রণালয় এ লাইসেন্স দেয়। পরের বছরের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স। প্রতিষ্ঠানটিতে বেক্সিমকোর সঙ্গে অংশীদার হিসেবে রয়েছে রাশিয়ার বিনিয়োগ ও শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠান জিএস গ্রুপ।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ডিটিএইচের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স। প্রথম বছর তিন লাখ এবং পরবর্তী প্রতি বছর নতুন চার লাখ গ্রাহককে এ সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নানা জটিলতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেবাটি চালু করতে পারেনি তারা। পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি এ সেবা চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এশিয়া ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট (এবিএস) গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো। বারমুডাভিত্তিক স্যাটেলাইট অপারেটর এবিএস ছয়টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সেবার আওতায় রয়েছে বিশ্বের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, ডিটিএইচ লাইসেন্স পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠান বায়ার মিডিয়া লিমিটেডও স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে নিউ স্কাইস স্যাটেলাইটসের সঙ্গে গত বছর চুক্তি করেছে। বেক্সিমকো ও বায়ার মিডিয়ার টেস্ট ট্রান্সমিশন কার্যক্রমের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে স্যাটেলাইট ডাউনলিংক তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ডলার।
শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তরঙ্গ ব্যবহার-বিষয়ক নির্দেশিকা চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী ফি ও অন্যান্য চার্জ প্রদান করতে হবে। তরঙ্গ ব্যবহার-বিষয়ক এ নির্দেশিকা তৈরিতে কাজ করছে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এদিকে গত মাসে ডিজিটাল কেবল টেলিভিশন সেবা চালু করেছে বেঙ্গল ডিজিটাল। বায়ার মিডিয়া ও বেঙ্গল ডিজিটাল একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল ভিডিও ব্রডকাস্টিং-কেবল (ডিভিবি-সি) প্রযুক্তির এ সেবার আওতায় চারটি প্যাকেজ চালু করেছে বেঙ্গল। মূলত কেবলের মাধ্যমে এ সেবা দেয়া হয়। তবে অ্যানালগ কেবল টিভি সেবার তুলনায় এতে উন্নত ছবি ও শব্দ উপভোগ করেন গ্রাহক। ২০১২ সালের মাঝামাঝি দেশে ডিভিবি-সি প্রযুক্তির এ সেবা চালু করে ডিজি ২১ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
এরই মধ্যে ডিটিএইচ সেবা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের যন্ত্রাংশের বিষয়ে অপারেটরদের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন। এতে বলা হয়েছে, এসব যন্ত্রাংশের মূল্য সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ের পর এ যন্ত্রাংশ চাইলে ফেরত দিতে পারবেন গ্রাহক।
বর্তমানে দেশে অনেকেই এ ধরনের সেবার আওতায় টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন। ভারতীয় ডিটিএইচ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টাটা স্কাই, ডিশ টিভি, সান ডিরেক্ট ও এয়ারটেল ডিজিটালসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক রয়েছে এ দেশে। তবে দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা বৈধ নয়।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০১৩ সালে ডিটিএইচ সেবা থেকে ১৭১ কোটি ডলার আয় করে। আগামী বছর নাগাদ তা প্রায় ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার।