প্রতিনিধি
চাঁদপুর সদর উপজেলার সফরমালী লঞ্চঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে মতলবের একদল ব্যবসায়ীর ট্রলারে স্পীডবোটযোগে ডাকাতি করে নগদ ৩০ লক্ষাধিক টাকা এবং ২০টি মোবাইল সেট নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র ডাকাত। ঘটনার পর মতলব দক্ষিণ থানার পুলিশ নারায়ণপুর বাজার এলাকা থেকে গতকাল রোববার দুপুরে দু� ডাকাতকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো : মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের রাজু রাজা বেপারী (২৫) ও একই গ্রামের চাঁন মিয়া ওরফে হৃদয় বেপারী (২০)। আটককৃতদের কাছ থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬শ� টাকা ও ২টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। পুলিশের সাথে ডাকাত দলের সংঘর্ষে কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে।
ট্রলারে থাকা একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গতকাল রোববার সকাল ১০টায় আমরা মতলব উত্তর উপজেলার এখলাসপুর বাজার থেকে ২০-২২জন ব্যবসায়ী মালামাল ক্রয় করার উদ্দেশ্যে ৩০ লক্ষাধিক টাকাসহ জেলা শহরে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে সফরমালী লঞ্চঘাট এলাকায় স্পীডবোটযোগে ৭-৮জন সশস্ত্র ডাকাত দল আমাদের ট্রলারের গতিরোধ করে ট্রলারের তেলের পাইপ কেটে দেয় এবং মেশিন চালানোর হ্যান্ডেলটি পানিতে ফেলে দেয়। তারা আমাদের কাছে থাকা ৩০ লক্ষাধিক টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ডাকাতদের হাতে দুটি পিস্তল ও প্রত্যেকের হাতেই একটি করে চাপাতি ছিলো। ডাকাতি শেষে ডাকাত দল স্পীডবোট নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ সময় আমরা ডাক-চিৎকার দিলে চাঁদপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মতলব দক্ষিণ থানাসহ আশপাশের থানায় ডাকাতির বিষয়টি অবহিত করে। এদিকে মতলব দক্ষিণ থানার এসআই কামালের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স মতলব ফেরিঘাট এলাকার ধনাগোদা নদীতে ওই ডাকাত দলের স্পীড বোটটির গতিরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় ডাকাত দল পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ৩-৪ রাউন্ড গুলি ছুড়লে পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। ডাকাত দলকে ধরার জন্য মতলবের বাইশপুর এলাকা দিয়ে এসআই কামাল ও মতলব-গৌরিপুর সড়ক দিয়ে এসআই মোর্শেদুল আলম ভূঁইয়া তাদেরকে ধাওয়া করে। পরে নারায়ণপুর এলাকা থেকে এসআই মোর্শেদুল আলম ভূঁইয়া ঐ দুজন ডাকাতকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬শ� টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ট্রলারের মাঝি নজরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দেয়া ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিলো। ডাকাতরা সে টাকাও নিয়ে যায়। এখন আমি পথের ভিখারী। কীভাবে ঐ ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরৎ দেবো। আমার ট্রলার বিক্রি করলেও এ টাকার যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
ডাকাতদের কবলে পড়া এখলাসপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ও ব্যবসায়ীরা হলেন : মোঃ চাঁন মিয়া প্রধানের ছেলে মোঃ মনির হোসেন (৩০), নগদ ৫২ হাজার টাকা, তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আবুল হোসেন (৫৫), নগদ ১ লাখ ২৭ হাজার ৭শ� টাকা, আঃ রহিম বেপারীর ছেলে তবারক উল্যাহ (৬৫), নগদ ৪২ হাজার ৩শ� টাকা, লোকমান মোল্লার ছেলে নসু মোল্লা (৬২), নগদ ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, উপেন্দ্র ঘোষের ছেলে মহারাজ ঘোষ (৫০), নগদ ২৪ হাজার টাকা, রতন ঘোষের ছেলে প্রদীপ ঘোষ (৪৫), নগদ ৫৫ হাজার টাকা, রহমত আলী সরকারের ছেলে কাশেম (৩৫), নগদ ৬০ হাজার টাকা, আঃ রব শিকদারের ছেলে রহিম শিকদার (৪৫), নগদ ৬০ হাজার টাকা, মৃত আঃ রাজ্জাক মোল্লার ছেলে মানিক মোল্লা (৪৬), নগদ ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা, মৃত হরিদট ঘোষের ছেলে দিলীপ ঘোষ (৪২), নগদ ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা, মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৫৫), নগদ ২৭ হাজার ৩শ� টাকা, সোবহান বকাউলের ছেলে আহম্মদ উল্যাহ (৫২), নগদ ৭২ হাজার টাকা, মতিন মাঝির ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), নগদ ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ভাষাণ চন্দ্র ঘোষের ছেলে অরুণ ঘোষ (৩৬), নগদ ৪২ হাজার ৫শ� টাকা। এছাড়া আরো বেশ ক�জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোবাইলসহ নগদ অর্থ নিয়ে যায়।
মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আটক দু ডাকাতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। অন্য ডাকাতদের ধরার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যাপারে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি মামলা হয়েছে।