মিজান লিটন ॥
বাদশা আলমগীরের নামানুসারে আলমগীরি মসজিদ এবং বাদশা শাহসুজার নামানুসারে শাহসুজা মসজিদ। প্রায় ৪শ’ত বছর পুরোনো এই মসজিদ দুইটি। এখন ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সংস্কার। আর সংস্কার করতে হলে প্রয়োজন সরকারের সু-দৃষ্টি।
এই দুই মসজিদের পাশে শায়িত রয়েছেন চারজন আওলিয়া। সেই আওলিয়াগণের নামানুসারে অলিপুর গ্রাম। গ্রামটি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা ৫ নং সদর ইউনিয়নে অবস্থিত। এলাকাবাসীর দাবি সংস্কারের অভাবে পুরনো মসজিদ দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
ইতিহাস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, মসজিদগুলো প্রতিষ্ঠালগ্নে এই উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের পূর্বে মোঘল রাজত্ব ছিলো। ইতিহাস ঐতিহ্যে জেলার তথ্য বাতায়নে এই দুই মসজিদের নাম থাকলেও নেই স্থানীয় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদ দুইটি ১৬৫০ খিস্ট্রাব্দে নির্মিত হয়। অলিপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ির সামনে এই মসজিদ দুইটির ফলকে গায়ে ফার্সি ভাষায় শাহ বাদশাহ আওরঙ্গজেবের নাম উল্লেখ রয়েছে। একটি মসজিদ থেকে আরেকটি মসজিদের প্রায় ৫’শ গজ দুরত্ব। আলমগীরি মসজিদটিতে ৫ টি গুম্বজ রয়েছে। মসজিদের মূল স্থাপনা ৪ টি পিলারের উপর দাঁড়ানো থাকলেও প্রতিটি গুম্বজ ৪ টি করে পিলার রয়েছে। আর প্রতিটি দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট।
এদিকে শাহসুজা মসজিদ ৩ টি গুম্বজের উপর দাঁড়ানো। মাঝখানের মূল অংশে বড় ধরনের একটি গুম্বজ আর তার দুই পাশে ছোট দুটি গুম্বজ রয়েছে। এই মসজিদে একসাথে শতাধিক মুসল্লী নামাজ পড়তে পারে। দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট।
শাহসুজা জামে মসজিদের ইমাম রহমত উল্লা (৫০) জানান, কয়েক বছর আগে এই মসজিদটি স্থানীয়ভাবে সংস্কার করা হয়। আর এই কাজ করতে গিয়ে এর কারুশিল্প অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
আলমগীরি মসজিদের মুসল্লী আলী আজহার ও মসজিদের ইমাম জিকর উল্লা বলেন, ১৯৯৮ সালে সরকারী ভাবে একবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়। তখন অনেক কারুকাজ নষ্ট করে ফেলেছে। মসজিদের গায়ে আনারস, ফুলসহ বিভিন্ন সৌন্দর্য খচিত কারুকাজ ছিলো। এখন একটু বৃষ্টি হলে দেয়াল ভিজে উঠে আর স্যাত-স্যাতে হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিলসহ মসজিদের সকল ব্যয়ভার স্থানীয় মুসল্লীদের করতে হয়।
এলাকার বাসিন্দা আঃ রশিদ বলেন, বাবা আঃ রহমান উনার দাদা থেকে শুনেছেন এই মসজিদ গুলো মোঘলরা কুমিল্লায় ভ্রমনে এসে নির্মাণ করেছেন। দুই মসজিদের পাশে ৪ অলির মাজার রয়েছে। এই অলিগণের মাজারের পাশে একটি দিঘী রয়েছে। এই দিঘীতে অলৌকিক বেশ ঘটনা ঘটেছে। এখানে গভীর রাতে অনেক উচ্চ স্বরে কোরআন পাঠ আর জিকিরের শব্দ ভেসে আসতো। ঠিক কারা কোথায় কোরআন পাঠ করতো তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যেতো না। এখন এই দুটি মসজিদ ও ৪ অলির মাজারকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বরাদ্ধ হয়েছে কিনা প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মামনুর রহমান মজুমদার বলেন, বরাদ্ধ হয়নি। তবে আগামীতে সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হবে।
মসজিদ দু’টির সংস্কার প্রসঙ্গে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. মুর্শিদুল ইসলাম অতি দ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।