স্টাফ রিপোর্টার
দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ মাদ্রাসা চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজারস্থ চান্দ্রা বাজার নুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা। সকল ক্ষেত্রেই দূর্নীতি ও অনিয়মের স্বাক্ষর রেখেছে এ মাদ্রাসাটি। সম্প্রতি একটি নিয়োগকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য করছে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমটির এক সদস্য। জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় চান্দ্রা বাজার নুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় ইংরেজী প্রভাষক, কম্পিউটার শিক্ষক ও নি¤œমান অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (কেরানী) এ ৩টি পদে লোক চেয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৫ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। কেরানী পদে আবেদন করে সাইফুল ইসলাম, মাওঃ দেলোয়ার, মাওলানা ইদ্রিছ, মাওলানা মনির কাজী, আঃ মান্নান (সুমন) পাটওয়ারী ও মোঃ আবু তাহের কাজীসহ ১৫ জন। নিয়োগের জন্য এখনো কোনো পত্র প্রেরণ করা হয়নি। কিন্তু এর আগেই ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকুরী নিশ্চিত করে আলআমিন মডেল একাডেমীর সহকারী শিক্ষক ৪১ বছর বয়সী মোঃ আবু তাহের কাজী। আর এ নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ইব্রাহীম, শিক্ষক মাওঃ নূর মোহাম্মদ খান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আঃ মান্নান পাটওয়ারী। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন গতকাল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি চাঁদপুর নিউজকে জানায়, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আঃ মান্নান পাটওয়ারী ও তাহের কাজী সম্পর্কে ভায়রা হয়। তাই ভায়রাকে নিয়োগ দিতেই যত কলাকৌশল অবলম্বন করে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকুরী নিশ্চিত করে। তাহের কাজী এলাকার সর্বত্র প্রচার করছে তার চাকুরী হয়ে গেছে। কোনো প্রার্থী আবেদন করবে শুনলে তাহের কাজী বলে, তাহের কাজী যেখানে আবেদন করে সেখানে অন্য সবার আবেদন গ্রহণযোগ্য না। শুধু শুধু আবেদন করে সময় নষ্ট করছে।
উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী ভোটার তালিকা হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নাম- মোঃ আবু তাহের কাজী, পিতা-মৃত আব্দুর রহমান কাজী, জন্মতারিখ- ১৫-১২-১৯৭২ইং। ভোটার তালিকার ক্রমিক নং- ৩২৪ ও ভোটার নং- ১৩০২৩০৩৩২৪৯৪। সে অনুযায়ী বয়স গতকাল পর্যন্ত ৪১ বছর ১১ মাস ১ দিন। বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আবেদন করে চাকুরী নিশ্চিতের আভাসই দিলো তাহের কাজী।
এছাড়াও উক্ত মাদরাসা ভূয়া সনদপত্র প্রদান করে। যা ইতিমধ্যে ওই ইউনিয়নে আলোড়ন তুলেছে। জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে জন্মনিবন্ধন নিতে হলে বয়সের প্রমাণপত্র দিতে হয়। যদি কারো প্রমাণ পত্র না থাকে সে ক্ষেত্রে তাকে প্রমাণপত্র আনার জন্য বলা হয়। চান্দ্রা বাজার নুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসায় শিক্ষক নুর মোহাম্মদ খানের সহযোগিতায় ও অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীমের স্বাক্ষরিত সনদপত্র ৪শ’-৫শ’ টাকা খরচ করলেই খুব সহজেই পাওয়া যায়। এবার অত্র মাদ্রাসায় পড়–ক বা না পড়–ক। এমনো দেখা গেছে ওই মাদ্রাসায় বর্তমান অষ্টম শ্রেণীর এমরান হোসেন নামের এক ছাত্রকে অষ্টম শ্রেণী পাসের সনদ দিয়েছে। যাতে উল্লেখ আছে ওই ছাত্র ২০০৪ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীমকে (০১৭১৫৮৮৭১৩০) মোবাইলে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি মিথ্যা বলে ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে কল করা হলে তার মোবাইল ফোন ওয়েটিং পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আবার মোবাইল রিসিভ করে বলেন, আপনি মান্নান পাটওয়ারীর সাথে যোগাযোগ করেন। তাহের কাজী পাঠা বিধায় সে নিজের কথা নিজে প্রচার করছে। মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলা হলে তিনি বলেন, মাদ্রাসার ওই সকল শিক্ষক আমার বিরোধী লোক। ইতিপূর্বেও প্রচুর ভূয়া সনদ দিয়েছেন এবং এর প্রমাণও আছে বলা হলে তিনি এ রিপোর্টারের সাথে উত্তেজিত হয়ে ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নূর মোহাম্মদের (০১৮১২০৮১৭৫০) মোবাইলে অনেকবার কল দিলেও উনি রিসিভ করেন নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১৬ নভেম্বর গভীর রাতে শিক্ষক নূর মোহাম্মদ খান ও আঃ মান্নান পাটওয়ারী অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীমের বাড়িতে এসে টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।
এ বিষয়ে অন্যান্য আবেদনকারীর সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, দু’ একদিনের মধ্যে আমরা সবার স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র জেলা প্রশাসক মহোদয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরা দাখিল করবো। এ বিষয়ে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
শিরোনাম:
সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৮ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।