চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুজিববর্ষে প্রথম বার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৭ মার্চ) সকাল ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতাম না। অনেক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীকে আজকের এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ায়। যার দরুন ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি এবং এটি খুবই প্রয়োজন ছিলো।
জেলা প্রশাসক বলেন, জাতির পিতা ৭ই মার্চে স্বাধীনতার ঘোষনা সরাসরিভাবে না করলেও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি আমাদের প্রস্তুত থাকার জন্যে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি সবকিছু ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বাধীনতার কোন দ্বারপ্রান্তে আমরা এসেছি সেই কাহিনী আমাদেরকে বলেছিলেন। কাজেই এ ভাষনটির প্রেক্ষাপট জানানো এবং কেন ৭ মার্চ আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন প্রজন্মকে জানানো অনেক প্রয়োজন আছে। হঠাৎ করেই এদেশটি স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন যুদ্ধ করছেন এ দেশের জন্যে এবং এদেশটিকে স্বাধীনতার পর্যায়ে উপনিত করেছেন।
ডিসি বলেন, ৭ই মার্চের ভাষনের প্রেক্ষাপট সস্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষনটিকে আরো প্রচার ও প্রসার করা দরকার। এ ভাষন নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি এবং গর্ববোধ করা উচিত।
এসময় তিনি ভাষনটি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে সভায় উপস্থিত সকলের অনুমতি এবং অনুভুতি জানতে চাইলে সবাই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মতি প্রকাশ করেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুর রহমান বক্তব্যে বলেন, আমরা এবারই প্রথম এ দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করছি। এই কারণে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের বছর হিসেবে এই ৭ই মার্চ আজকে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে আমাদের প্রতিটি ধমনীতে। একটি গণমাধ্যমে দেখে ছিলাম একটি নিউজে ‘একটি ভাষন একটি দেশ’। ওইটা দেখেই প্রথমেই মনে হচ্ছিলো আসলে এর ভিতরে কি রয়েছে। অত্যন্ত চমৎকারভাবে আজকে সবাই এ ভাষণের দিক তুলে ধরেছেন। সমস্ত প্রেক্ষাপট নিয়েই সবাই আলোচনা করেছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধু যেদিন ৭ই মার্চের ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন, সেদিন তাঁর সাথে থাকা তাঁর গাড়ির চালক কাজী গোলাম মোর্শেদ ছিলেন, যিনি এখনো বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধু গাড়ী থেকে নামার পর কাজী গোলাম মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু আপনার ফাইল কই?” তখন গভীরভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “আমার অন্তরেই সবকিছু আছে।”
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আর এই বিজয়ের পিছনের যে অভিব্যক্তি, সেটা এখানে বক্তারা বলেছেন। এটা কিন্তু ৭ই মার্চের তাৎক্ষণিক কোন ভাষন নয়, এটা সারাজীবনের পুঞ্জিভূত একটা ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ছিলো। কিন্তু মূল বিবেচ্য বিষয় ছিল যে এত তাৎক্ষণিকভাবে সারা জিবনের কল্পিক বাসনা গুলোকে কিভাবে ১৮ মিনিটে সুস্পষ্ট, সুচারু এবং হৃদয়গ্রাহী করে প্রকাশ করা যায়! ঠিক যেন হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মত। আমাদের বঙ্গবন্ধুও যাদুকরী বাঁশীওয়ালা ছিলেন। এমনভাবে তিনি ১৮ মিনিট বাঁশী বাজিয়েছিলেন, তাঁ শব্দচয়ন প্রতিটি বাঙ্গালীকে আলোড়িত করেছিলো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পিযুষ কান্তি বড়ুয়া প্রমূখ।
আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক একেএম দিদারুল আলম ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন সরকার।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট/চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/