
# করোনায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
# আর্থিক প্রণোদনার কেউ অপব্যবহার করবেন না
# করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ চাকরি হারাবে না
# পবিত্র শবেবরাত ও নববর্ষ ঘরে বসে পালন করুন
স্টাফ রিপোর্টার : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে নতুন করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
গতকাল রোববার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও কেন্দ্রগুলো প্রেস কনফারেন্সটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়। চীনে করোনা ছড়ানোর পরপরই বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশে এযাবৎ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় করোনা ভাইরাস এখনও ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ঘটেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর ফলে আল্লাহর রহমতে এখনও আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশার বাণী এটুকু যে সুস্থতার লক্ষণ বেশি। আমরা দেখছি মানুষ সুস্থ হচ্ছে, কাজেই এখানে খুব বেশি একটা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবু আমি মনেকরি সবাই যদি নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশনা যথাযথবভাবে মেনে চলেন তাহলে খুব দ্রুত সুস্থতা লাভ করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৭০ বছরের ওপরে। এবং তাঁরা অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তবে একটি মৃত্যুও কাম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনসাধারণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুরু থেকে তিন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি বৈশ্বিক মহামন্দা অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর করোনার প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে গেছে। শেয়ারবাজারে ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। করোনার প্রভাব প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে পড়তে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে তাৎক্ষণিক করণীয়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান। এর ফল নিম্নবিত্ত মানুষ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা দেওয়ার কথা জানান। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথা জানান শেখ হাসিনা।
প্যাকেজ-১: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল–সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেওয়া।
এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটিরশিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল-সুবিধা প্রদান: ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।
এ ঋণসুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
প্যাকেজ-৩: বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো: ব্লক টু ব্লক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি–সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩ %) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
প্যাকেজ-৪: প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণসুবিধা চালু করবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।
প্যাকেজ-৫: এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আশ্চর্য সহনশীল। তারা ৯ মাসের মধ্যে যুদ্ধ জয় করেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, এ জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতার এ বাণী স্মরণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪টি কার্যক্রম হলো
সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি’র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।
আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ : ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো : বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সকলের কষ্ট লাঘব করা আমাদের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব নিয়েই আমরা আজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর সুফলটা আশা করি সকলেই পাবে। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি, কোনো অনিয়ম বা কোনো অপব্যবহার না করেন। আমার সোজা কথা-কেউ এর সুযোগ নিয়ে এর অপব্যবহার করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি তাহলে কোনো সেকশনের মানুষই, যে যে সেকশনে কাজ করেন, কেউই অসুবিধায় পড়বেন না।
তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ থেকে আমার কাছে নানা রকমের তথ্য আসছিল। অনেকে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বিশেষ করে যারা ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য জড়িত। কৃষি-কামার, কুমার-জেলে, তাঁতী, পোল্ট্রি-মৎস্য, ডেইরি বিভিন্ন ব্যবসায় যারা জড়িত, তারা বেশ সমস্যায় পড়ে গেছেন বলে মনে করছেন। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বিশেষ করে ঋণ নিয়ে, বিভিন্ন ধরনের বিল নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন।’
পবিত্র শবে বরাত ও বাংলা নববর্ষ ঘরে বসে নিজের মতো করে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারির সার্বিক পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের বাংলা নতুন বছর। এদিন আপনারা ঘরে বসে উদযাপন করুন। সবকিছু মিডিয়ার মাধ্যমে হবে, সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরমধ্যে আমাদের শবে বরাত আছে। সকলে ঘরে বসে দোয়া করুন যেন মহান আল্লাহ আমাদের বরাত ভাল রাখেন। দেশের মানুষ যেন এগিয়ে যেতে পারে। এ মহামারি থেকে যেন বিশ্ববাসী রক্ষা পায়।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য মতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া খাতগুলো হচ্ছে
আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সার্ভিস সেক্টর বিশেষত: হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাসের কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে; যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী-আয়ের ওপর।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে মর্মে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে।
চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকসমূহের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঘোষিত প্যাকেজের সুফল পাওয়া যাবে। একসময় নিশ্চয়ই বিপদ কেটে যাবে। তবে সরকারকে চালকের আসনে বসতে হবে।