মিজান লিটন
আট বছর পর পাগল মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় খুঁজে পেলো তার মা। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার চাঁদপুর জেলা কারাগারে। কিশেরাগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর পৌরসভার তাতারকান্দি মহল্লার সাজেদা বেগম তার মেয়ে কুলসুমকে ফিরে পায় গতকাল চাঁদপুর জেলা কারগারে। মেয়েকে ফিরে পেয়ে অনেকটা আবেগ আপ্লেুত হয়ে খুশিতে মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এদিকে কুলসুমও তার মাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন। মাকে পেয়ে কুলসুমা এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। আজ আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানান চাঁদপুর জেল সুপার।
ঘটনার বিবরণে চাঁদপুর জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট হাইমচর থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়ে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতী হিসেবে বেলী (কুলসুম আক্তার)কে চাঁদপুর জেলা কারাগারে প্রথম পাঠানো হয়। চাঁদপুর জেলা কারাগার তার মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে পাবনা জেলা কারাগারের মাধ্যমে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। চিকিৎসা শেষে চাঁদপুর জেলা কারাগারে দ্বিতীয় বারের মত নিরাপদ হেফাজতী হিসেব ফেরৎ আসলে ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রবেশন অফিসার চাঁদপুরের সহযোগিতায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় তাকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ সেফ হোমে পাঠানো হয়। সেখানে সে চুপ চাপ থাকতো, কারো সাথে কোনো কথা বলত না। তার আচরণে অনেকটা মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে হাটহাজারী মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে তার কোনো উন্নতি না দেখে তাকে পুনরায় দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় সেফ কাস্টডি অথরিটি আবারও চাঁদপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৪ মে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠায়। উন্নত চিকিৎসা শেষে গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৪ শারীরিক ও মানসিকভাবে মোটামুটি সুস্থ হয়ে চাঁদপুর জেলা কারাগারে ফেরৎ আসে। তার কাছে তার পরিবারের ঠিকানা জানতে চাইলে সে তার ঠিকানা হিসেবে কুলিয়ারচর বলে জানায় এবং তার বাবার নাম জিনু খাঁ (টুন্ডা) বলে। এরপর চাঁদপুর জেল সুপারের আন্তরিক চেষ্টায় কিশোরগঞ্জ জেলা কারা কর্তৃপক্ষের এবং স্থানীয় মেয়র ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বেলীর (কুলসুমা আক্তার)-এর পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় এবং তার পরিবারের পরিচয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
বেলী (কুলসুমা আক্তার)-এর হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার মা সাজেদা বেগম জানান, কুলসুম আক্তার প্রায় আট বছর আগে পাগল অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ৫ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় কুলসুম। গত ২০০৫ সালে কুলছুমকে ১৮ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ে দেয় তার পরিবার। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। বিয়ের প্রায় ৩ মাস পর পাগল হয়ে যায় কুলসুম। কুলসুমের পাগলামি দিন দিন বাড়তে থাকলে তাকে তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এভাবে প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন গভীর রাতে তাকে বেঁধে রাখা শিকল খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় কুলসুম। দীর্ঘ কয়েক বছর অতিবাহিত হলে পরিবারের সদস্যরা মনে করেছিল যে, কুলসুম হয়তো আর বেঁচে নেই। অনেকটা আশাই ছিলো না তাকে খুঁজে পাওয়ার। আট বছর পর মেয়েকে পাওয়ার খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে মা ছুটে আসেন চাঁদপুরে।
কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপদ হেফজতী বেলীকে পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে প্যারালিগ্যাল ও বিজ্ঞ কৌঁসুলির সহায়তায় তার পরিবারকে বিজ্ঞ আদালত বরাবরে আবেদনের নির্দেশনা দেয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়া সাপেক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানায় জেলা কারা কর্তৃপক্ষ।