কয়লা সংকটে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। সে সংকট না কাটতেই এবার বন্ধ হয়ে গেল ভারতের আদানি গ্রুপের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা। হঠাৎ আকস্মিক ঝড়ে বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গতকাল বেলা পৌনে ৩টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বিকালের দিকে লোডশেডিং অনেক বেড়ে যায়। তবে রাতের মধ্যেই সঞ্চালন লাইন ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা।
ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানির কয়লাভিত্তিক গড্ডা কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এ বিদ্যুৎ। রোহনপুরে গতকাল ঝড়ের কারণে লাইন ট্রিপ করে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তারা। এতে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যায়। চলমান বিদ্যুৎ সকটের মধ্যে তীব্র হয় লোডশেডিং।
জানা গেছে, গতকাল বেলা ২টায় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৪৬৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করতে হয়েছে ২ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। আদানির সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বেলা ৩টায় উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬১০ মেগাওয়াটে। লোডশেডিং বেড়ে হয় ৩ হাজার ১৪২ মেগাওয়াট।
রাত ১১টার দিকে বিপিডিবির জনসংযোগ পরিচালক শামীম হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঝড়ের কারণে রোহনপুরে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে বেলা ২টা ৪৬ মিনিটে মেরামতের সময় সঞ্চালন লাইন ট্রিপ করে। তবে রাতেই সঞ্চালন লাইন ঠিক করা হয়েছে। মধ্যরাতের পর সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে পারে।’
তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়নি বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, বড় আকারের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র একবার বন্ধ করা হলে পুনরায় চালু করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এরই মধ্যে এটি চালু করা হয়েছে বলে পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় গতকাল কোনো ঝড় হয়নি। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০ মিনিটের মতো সামান্য বৃষ্টির সঙ্গে ছিল হালকা ঝড়ো বাতাস। সামান্য এ ঝড়ে পিজিসিবির লাইন ট্রিপ করার ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা আরো উন্নত করা উচিত। না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সঞ্চালন লাইনের কারণে এর আগে দেশের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। ওই ব্লাকআউটের পর আরো একবার দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এর আগে কয়লার তীব্র সংকটের মুখে গত সোমবার পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরো বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটের কারণে একই সক্ষমতার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও খুবই কম উৎপাদন করছে। এতে দেশব্যাপী লোডশেডিং তীব্র হয়েছে।
ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপ ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এতে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রথম ইউনিট থেকে গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় গত মার্চে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে তিনদিন আগে। এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে রোহনপুর পর্যন্ত আনতে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভির সঞ্চালন লাইন রয়েছে। ওই লাইনে বিদ্যুৎ রোহনপুর পর্যন্ত আনার পর তা বগুড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালন করতে রয়েছে একই ক্ষমতার আরেকটি লাইন।
২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ কিনবে বিপিডিবি। তবে উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। এ নিয়ে এরই মধ্যে আদানির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আদানির প্রতিনিধি দল বলেছে, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দামের চেয়ে তাদের কয়লার দাম বেশি হবে না। বিষয়টি সমাধানে দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত সমঝোতা চলছে। এছাড়া আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন।