পবিত্র রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে এখন পূর্বের চেয়ে যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব যাত্রী তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়া করে ট্রেন থেকে নামতে ও উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করছে। আবার অনেককে প্রাণ পর্যন্ত হারিয়ে শেষ ঠিকানা কবরে যেতে হচ্ছে। চাঁদপুরের সচেতন মানুষের প্রশ্ন : আর কত মানুষের প্রাণ গেলে এ রেললাইনের পাশের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হবে? এসব ব্যবসায়ীর কী এতই শক্তি যে, এরা নিজেদের ইচ্ছা মতো এখানে বছরের পর বছর ব্যবসা করে যাবে? রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কেউ আসার খবর শুনলে দোকান সরিয়ে এরা সাদামনের মানুষের মত নিজেরাই স্টেশন এলাকা সাদা করে ফেলে। আবার তাদের প্রয়োজনে তারা রেললাইনের ২ পাশেই শুধু নয়, রেললাইনের উপরে পর্যন্ত তাদের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে।
চাঁদপুর শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে থাকে। এ গুরুত্বপূর্ণ জনাকীর্ণ এলাকায় রেললাইনের ২ পাশে গেইটঘর লাগোয়া রয়েছে অবৈধভাবে অনেক দোকান। গেইট ঘরের ভেতরে রয়েছে ফলের আড়ত ও গোডাউন। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এ অবৈধ ফলের দোকানের কারণে ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মালামাল নিয়ে উঠতে ও নামতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে মৃত্যুসহ অঙ্গহানি ঘটছে। এখানকার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীদের আরো অভিযোগ, এদেরকে প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করছেন একজন স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ের এ পথের দায়িত্বে থাকা একজন মিস্ত্রী। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে এসব দোকান বসানো হয়েছে। যা তদন্ত করলে প্রকাশ পাবে।
অন্যদিকে রেললাইন থেকে ২০/৩০ ফুট দূরে বৈধভাবে ব্যবসা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিচ্ছে। আর অবৈধ ব্যবসায়ীরা কোনোরূপ রাজস্ব না দিয়ে রেললাইনের পাশে দেদারসে ব্যবসা করে করছে। রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কেউ আসলে অবৈধ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। কর্তৃপক্ষ চলে গেলে আবার দোকান বসানো হয়। এখানে অবৈধ দোকানের উদ্যোক্তা উল্লখযোগ্য ব্যক্তিরা হচ্ছে : মোঃ মুনাফ মিজি, লতিফ মাতাব্বর, আল-আমিন, আব্দুর রশিদ, মোঃ দুদু মিয়া, লাদেন মোল্লা শাহাতলী, মোঃ জসিম, মোঃ মুরাদ, মোঃ বাচ্চু মিয়া, মোঃ ইসহাক মিয়া ও কবিরাজ।
এসব অবৈধ দোকানদারকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ নোটিস দেয়ার পরও তারা সেখানে স্থায়ীভাবে দোকান বসিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে বেশি দামে ফল বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের খুঁটির জোর কোথায়? অবৈধ দোকানে রাতে জ্বালানো কয়েলের আগুন থেকে অগি্নকা-ের সৃষ্টি হয়ে বর্তমান পাকা এ গেইট ঘরটি তখন টিন ও কাঠের থাকায় আগুনে পুড়ে রেলওয়ের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধিত হয়। এত বড় দুর্ঘটনার পরও তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার কোনো মামলা বা শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে এসব দোকানী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গত ১ এপ্রিল চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ৩ দিন অবৈধ দোকানগুলো সরিয়ে রাখা হয়েছিল। এতে কোর্ট স্টেশন এলাকার পরিবেশ ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরের দিন থেকে পুনরায় অবৈধ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চর দখলের মতো জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ নিশ্চুপ থাকায় তারা প্রতিযোগিতা করে প্রতিদিন নতুন নতুন দোকান বসাচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের চিঠি দিয়ে উচ্ছেদ না করায় তারা আরো মজবুত করে দোকান নির্মাণ করছে। এসব অবৈধ দোকানদারদের খুঁটির জোর কোথায় তা চাঁদপুরের সচেতন মানুষ জানতে চায়।
রেলওয়ে কোর্ট স্টেশন গেইট ঘরটি ফলের আড়ত হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এটি দেখার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। নাশকতা সৃষ্টিকারী একটি চক্র সবসময় এই রেলওয়ে গেইট ঘরে অবস্থান করে বলে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর গেইট ঘরটি টিন শেড থেকে পাকা হওয়ায় অবৈধ ব্যবসায়ীদের পক্ষে আরো ভালো হয়েছে। তারা অবৈধভাবে মালামাল রাখার পর সরকারি বিদ্যুৎ ব্যবহার ও প্রতিনিয়ত টয়লেটটি ব্যবহার করে এটিকে গণশৌচাগারে পরিণত করেছে। ইতিপূর্বে গেইট ঘর সংলগ্ন দোকান উচ্ছেদ হলেও আবার দোকান বসিয়ে দাপটের সাথে চড়াদামে বিভিন্ন ফল ও মালামাল বিক্রি করে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধভাবে রেললাইনের ২ পাশে ও উপরে দোকান বসানো হচ্ছে। ট্রেন আসছে দেখলে দোকান সরানো হয়। আবার ট্রেন চলে গেলে দোকান বসিয়ে দোকানদারি চলে। এ অবৈধ দোকানদারদের কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এভাবে চলতে থাকলে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাবে। এ বিষয়ে অতি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি ও তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন শহরবাসী।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ মোঃ আমিনুল হক জানান, আমার অফিসের কেউ এখান থেকে কোনো সুবিধা ভোগ করে না। কয়েকবার উচ্ছেদ করার পর আবার বসে। আমাদের এখানে স্থায়ীভাবে ডিউটি দেয়ার কোনো লোক নেই। তাদের হাত লম্বা হওয়ায় উচ্ছেদের পর পুনরায় বসে। তবে যাত্রীদের যাতায়াতের স্বার্থে আবার উচ্ছেদ করে ব্যবস্থা নেবো। যেভাবে ফলের দোকান বসেছে, তাতে যাত্রী যাতায়াতের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের নিয়ম মোতাবেক রেলওয়ের কোনো জায়গা প্রয়োজন না হলে তাও রেললাইন থেকে ২০/৩০ ফুট দূরে হলে সে জায়গা নীতিমালা মোতাবেক লিজ দেয়া যেতে পারে। রেললাইনের কাছে কোনো জায়গা লিজ দেয়ার বিধান নেই। চাঁদপুরের বিষয়টি দেখার জন্যে আমাদের দায়িত্বরত ব্যক্তি রয়েছে, তার সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) ব্যবস্থাপক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চাঁদপুরে উচ্ছেদ অভিযান হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে অচিরেই একটি উচ্ছেদ অভিযান হবে। চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের গেইট ঘর সংলগ্ন স্থানের অবৈধ দোকানের বিষয়টি আমার জানা আছে। সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিব। অবৈধ সবসময় অবৈধ। রেলওয়ের যাত্রীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যাত্রী ট্রেনে উঠতে গিয়ে সমস্যা পড়ার মতো পরিস্থিতি যেনো না হয় তা দেখছি।