শাহরিয়ার খান কৌশিক :
চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসীক কলোনীর ভূইয়া বাড়িতে চাঞ্চল্যকর কোহিনুর হত্যাকান্ডের মূল ঘাতক নয়ন বেগমকে অবশেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। শ্বাষরোদ্ধকর হত্যার ৫৪ ঘন্টা পর চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ সফল অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাত ৩ টায় জিটি রোড তেতুল তলায় ঘাতকের মামা ধনু ও কুদ্দুছ পাটওয়ারী বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় রহমতপুর ভূইয়া বাড়ি সংলগ্ন আলি আহম্মেদ ঢালীর ছোট মেয়ে নয়ন বেগম তার নিজ ঘরে শনিবার রাতে পাওনাদার কোহিনুর বেগমকে টাকা দেওয়ার নামে বাসায় এনে কুপিয়ে নিসংশভাবে হত্যা করে। হত্যার পর কোহিনুরের শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করে তার সহযোগি ধেন্দা রফিক ভূইয়া সহযোগিতায় কোহিনুরকে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। ঘাতক নয়ন বেগম হত্যাকন্ডের পর পর তার বড় বোন তালতলা পাটওয়ারী বাড়ির মিজান পাটওয়ারীর স্ত্রী নারগিছের বাসা যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বাগাদী ইউনিয়নের নানিপুরে আরেক বোন পারুলের বাড়িতে যায়। হত্যার ঘটনা জানতে পেরে পারুল বোনকে লুকানোর জন্য তার মেয়ের শশুর বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার নয়ারহাটে পাঠিয়ে দেয়। চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই আহসানুর জামান লাভু আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করে (মোবাইল ট্রেকিং)-এর মাধ্যমে শনিবার রাতেই ঐ এলাকায় গিয়ে অভিযান চালায়। ঘাতক নয়ন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মুখোশ পড়ে শেখান থেকে বাসযোগে নারায়নঞ্জের পাগলায় আরেক বোন খোরশেদার বাড়িতে চলে যায়। পুলিশের চৌখশ দল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পেরে নারায়নগঞ্জে মাইক্রবাস নিয়ে সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়। পুলিশ যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ঘাতক নয়ন ঢাকা যাত্রাবাড়ি তার মামাতো ভাই জসিমের বাড়িতে যায়। জসিমের কাছে কিছু সময় অবস্থান করার পর পদ্মা বাস যোগে সে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুর মহামায়া বাজার এলাকায় এসে নামে। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে মুন্সিরহাট হয়ে ধনপদ্ধি ও বিষ্ণপুর গ্রাম দিয়ে বিটি রোডে সেনের দিঘীরপার তেতুলতলা এলাকার খন্দকার বাড়ির পাশে তার মামা ধনু পাওয়ারী, কুদ্দুছ পাটওয়ারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এদিকে আসামীর সন্ধান মিলেছে বলে গুনরাজদী ময়দার মিল এলাকার কিছু লোকজন পুলিশকে ভুল তথ্য দিলে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই আহসানুর জামান লাভু তার কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ঘাতক নয়ন বেগমের বড় বোন নাছিমার বাড়িতে গিয়ে তার
আত্মীয় স্বজনের বাড়ির লোকেশন জানেন। সোমবার রাতে পুলিশ তালতলা পাটওয়ারী বাড়িতে অবস্থান করার সময় ঘাতক নয়ন বোন নারগিছ বেগমকে ফোন করে মঙ্গলবার সকাল ৭ টায় তার সাথে দেখা করার জন্য বলে। ঐ ঘটনার সূত্র ধরেই চাঁদপুর মডেল থানার এসআই ওমর ফারুক, এএসআই আহসানুজ্জামান লাভু, এএসআই আওলাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিটিরোডে তেতুলতলা নয়নের মামা ধনু ও কুদ্দুছ পাটওয়ারী বাড়িতে মঙ্গলবার রাত ৩ টায় অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ তার মামার বাড়ি ঘেরাও করে অবশেষে ঘাতক নয়ন বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এসময় নয়ন বেগম পুলিশকে জানায় ঘটনার দিন শনিবার রাতে কোহিনুর বেগমের কাছ থেকে নেওয়া ৩ লক্ষ টাকার মাসিক ৩০ হাজার টাকা সুদ না দেওয়ায় কোহিনুর বেগম মুঠোফোনে গাল মন্দ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টাকা দেওয়ার নাম করে কোহিনুর বেগমকে বাড়ি এনে দা দিয়ে আঘাত করলে সে মারা যায়। এসময় ধেন্দা রফিক সাথে ছিল। এদিকে ঘাতক নয়ন বেগমকে আটকের পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স শেষে তাকে আদালতে নেওয়ার পর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।