ফাহিম শাহরিন কৌশিক
চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় একটি বৃহৎ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভয়াশ্রম ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে দিন-রাত চলছে জাটকা নিধনের মহোৎসব। স্থানীয় রহুল আমিন মেম্বারের ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার জাটকা আমদানি-রপ্তানি করা হয় বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে নীলকমল পুলিশ ফাঁড়ি অজ্ঞাত কারণে ব্যাপক অনিহা প্রকাশ করায় অবশেষে ইউএনও ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যনের পরামর্শক্রমে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সচেতন মহল ট্রলার যোগে জাটকা নিধন ও সংরক্ষনের মূল স্পট খোরশেদে আলীর মোড় থেকে জালিয়ার চর কাটাখাল পর্যন্ত স্থানে যায়। এ সময় জাটকা নিধনকারী প্রায় শতাধিক জেলেদের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট চক্র দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে করে কমপক্ষে ১০ জন আহত এবং ১ ট্রলার চালক নদীতে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে, শনিবার রাত ৮টায়। হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদ আলী মাস্টারের নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি ট্রলারযোগে ঐ এলাকা পরিদর্শন করে জাটকা আহরণকারীদের অভয়াশ্রম চলাকালে মাছ না ধরার জন্য বারন করে চলে আসে। বিষয়টি জেলেদের সিন্ডিকেট চক্রের হোতা নজু ফকির, জসিম চোকদার, হুমায়ুন কবির প্রধানীয়া, বিল্লাল বেপারী, মামুন বেপারী, মাইনুদ্দিন প্রধানীয়া, কামরুল প্রধানীয়া, রিপন, মনিরসহ অন্যান্যদের মোবাইল ফোনে মুহুর্তের মধ্যে অবগত করে। তাৎক্ষণিক সিন্ডিকেট চক্রটি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পেছন থেকে ট্রলারে থাকা লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে করে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতরা জানায়, হামলাকারীদের শিকার হয়ে জামালপুরের ১ ট্রলার চালক নদীতে পরে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। আহতদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে আহতদেরকে রাতেই চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতরা হলো ঃ চরভৈরবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদ আলী মাস্টার (৭০), কান্ট্রি ফিশিং বোর্ট মালিক সমিতির হাইমচর উপজেলা কমিটির সভাপতি ইলিয়াস লিটন (৪০), মনির সর্দার (৩৫), খোকন মাতাব্বর (৪০), লোকমান হোসেন, (৩৫), মহিউদ্দিন মোল্লা (৩৫), শাহজালাল (৪০) ও মজিব মিয়া (৩০)।
আহতরা জানায়, সরকার ঘোষিত মৎস্য সম্পদ রক্ষা অভিযান চলাকালে রুহুল আমিন মেম্বার, তার ছেলে বিল্লালসহ প্রায় শতাধিক অসাধু জেলে দিন-রাত অবাধে নিধন করছে জাটকা। এ বিষয়ে নীলকমল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহমানকে বেশ কয়েকবার অবগত করার পরেও তিনি তাতে বিন্দুমাত্র পরিমান সাড়া দেননি। অত্র এলাকার খোরশেদে আলীর মোড় থেকে জালিয়ার চর কাটাখাল পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার জাটকা ক্রয় বিক্রয় হয় বলে আহতরা জানায়। আহতদেরকে দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে হাসপাতালে যান জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়াসহ যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। তারা আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার বেলায়েত হোসেনের সাথে রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
এদিকে হামলার ঘটনার সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ড ও পুলিশ হাইমচরের মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে জাটকা নিধনের অপরাধে ১৪ জেলে ও হামলার সাথে জড়িত ৮ জনকে আটক করে। হাইমচর থানা সেকেন্ড অফিসার এসআই আঃ হালিম বলেন, হামলার খবর পেয়ে আমরা হামলায় জড়িত ৮জনকে আটক করেছি।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাটকা নিধন বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষে জেলেদের সচেতন করার জন্য সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা চাওয়া হয়েছে, সেই কাজে হামলা করবে এটা মেনে নেয়া যায়না, হামলাকারী এবং জাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী জানান, কতীপয় লোক জাটকা নিধন করে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে। তাদের নিভৃত হতে বলায় হামলা করবে তা মানা হবে না, হামলাকারীরা যতবড় নেতার ছায়ায় থাকুক; কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দলীয়ভাবে এবং আইনগতভাবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসময় আহতরা জানায়, প্রতিদিন নীলকমল নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ আঃ রহমানের নেতৃত্বে শ’ শ’ জেলে নদীতে জাটকা মাছ নিধন করে। এছাড়া তার পাহারায় প্রতিদিন রাতে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক জাটকা ইলিশ পাচার করা হয়। প্রতিদিন নৌ-পুলিশের ইনচার্জ আঃ রহমান জেলে ও আড়ৎদার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে তাদের সহযোগিতা করে। ঘটনার দিন রাতে তার ইন্দনে জেলেরা ও আড়ৎদাররা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে চরভৈরবী জেলে কাশেম তালুকদার, সেলিম গাজী।
– See more at: https://www.chandpur-barta.com/first-page/2015/03/23/28895#sthash.o5q4Qj0L.dpuf
