মিজানুর রহমান ॥ চাঁদপুরে এতো ইলিশ বাজারজাত করনের জন্য আসছে সেই মাছের ভার সইতে পারছেনা মাছঘাট। শুধু ট্রাকে করেই আসছে প্রায় ৫ হাজার মন মাছ। তা’ছাড়া ফিশিংবোট ও ঢোলের ইলিশতো আছেই। গড়ে এখন প্রতিদিন ৮ থেকে দশ হাজার মন ইলিশ আমদানি ও সরবরাহ হচ্ছে এমন তথ্যে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সূত্রে জানা যায়। পুরো মাছঘাটে ইলিশ আর ইলিশ। রাত দিন চলছে আড়তে চলছে মাছের জমজমাট ক্রয় বিক্রয় ও প্যাকেটজাত কার্যক্রম। ইলিশের স্তূপ ঘাট ছাপিয়ে রেল লাইনের ওপর এবং এর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ওপরে ইলিশ বোঝাই গাড়ির সিরিয়াল আর নদীরঘাটে ফিশিং বোট ও ট্রলার। মাছ রাখার জায়গা নেই।মাছের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বরফ সংকট পর্যন্ত দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর বরফকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিক উল্লাহ জানান, দুই দিন বরফ সংকট ছিলো, এখন নেই। চাঁদপুরের সাতটি বরফকল চাহিদা আনুযায়ী বরফ উৎপাদন করে সরবরাহ করছে। মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভুইয়া জানান, বরফ সংকটের দরুন রোববার বিকেলে থেকে ইলিশ বেচা বিক্রি ব্যাহত হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়,বেপারী,চালানী,শ্রমিক কর্মচারী,ইলিশ ক্রেতা বিক্রেতা সবাই ব্যস্ত ইলিশ নিয়ে। কম দামে ইলিশ কেনার জন্য উৎসুক মানুষের ভিড়। পাইকারি আড়তের কাছে তারা ঘেষতে পারছেনা। ঘাটের আনাচে কানাচে ইলিশ পসরা নিয়ে বসা মওসুমী ইলিশ বিক্রেতার কাছ থেকে দরদাম কষে মাছ কিনে ঘাট হতে ইলিশ কিনছেন অনেকে । জনা যায় চাঁদপুর ঘাটে আসা ইলিশের সিংহভাগই দক্ষিনাঞ্চলের সাগর ও নদী মেহনায় আহরিত । নোয়াখালীর হাতিয়া,পটুয়াখালীর মহিপুর,ভোলার ঢালচর, চর নিজাম,সামরাজ,চরফ্যাশন এলাকায় এবার রেকর্ড পরিমান ইলিশ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরে মাছ নিয়ে আসা বেপারীরা। আড়তদার বাবুল হাজীর বেপারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোলার চর নিজাম থেকে বিক্রির জন্য ২’শ মন ইলিশ ঘাটে এনেছেন। ভালো দাম পেয়ে মাছ বিক্রি করায় তিনি খুশি। হাজী শবেবরাত কোম্পানীর আড়তের বেপারী হাতিয়ার মনির মেম্বার জানান, আল্লাহ এবার যথেষ্ট ইলিশ দিছে। সেখান হতে মাছ এনে বিক্রি করছেন। জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ ইফসুফ বন্দুকশী জানান, আল্লাহর দানীয় মাছ এবার আল্লাহ দিয়েছে। তবে লোকালে মাছ কম।তার মতে, প্রতিদিন ৪/৫ হাজার মন ইলিশ ঘাটে ক্রয় বিক্রয় হয়। ৫’শ গ্রাম ওজনের ইলিশের মন পাইকারি দর ১৩ হাজার টাকা,৫শ’ গ্রামের উপরের সাইজের ইলিশের মন ১৬/১৭ হাজার টাকা হতে ২২/২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাজী মালেক খন্দকার,বাবুল হাজী, শবেবরাত কোম্পানি,কালু ভুইয়া,মানিক জমাদার,হাজী সিরাজ চোকদার(বড়), সিরাজ চোকদার,রব চোকদার,হাজী কুদ্দুছ খা,উত্তম দাস,মেজবাহ মাল, চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী নামের আড়ত গুলোতে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে। ভালো ইলিশের সাথে পচা ইলিশও দেখা গেছে প্রচুর। সেই মাছ কেটে ডিম আলাদা করে লবন দিয়ে সংরক্ষন কাজ চলছে পুরোদমে। বিপুল পরিমান ইলিশ কেটে এবার লবন দিয়ে রাখা হয়েছে। মালেক খন্দকার,সুমন নান্টু কাদির,দাদন মিয়া,জাকির হোসেন বেপারী,দেলু জমাদার,বাবুল হাজী, ইদ্রিস আলী গাজী,খালেক মাল নামে মৎস্য ব্যবসায়িরা লোনা,ভেলকা বা তিন নম্বার নামের এই ইলিশের ব্যাবসাও তারা করেন।মাছ বেশি হওয়ায় বরফ ব্যবসায়িরাও লালে লাল। তারা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে মওসুমী ইলিশ ক্রেতাদের কাছে দ্বিগুন তিনগুন দামে বরফ বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। আরব আলী(মোবারক হোসেন),সালেহ আহম্মদ গাজী,ইফনুছ মোল্লা,সাইফুল মোল্লা,নুর হোসেন,শাহআলমগীর,জমির,শহীদুল্লা,মফিজ হালদার,স্বপন প্রমুখ ঘাটে বরফ সরবরাহ করেন বলে স্থানিয়রা জানায়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানান, এতদিন ডাউনে সাগর ও নদী মোহনায় ইলিশ ধরা পড়লেও এখন মাছ ওপরে উঠে আসছে। গত কয়েক দিন লক্ষীপুর অঞ্চলে বেশ ইলিশ ধরা পরার পর চাঁদপুরের চর ভৈরবীতে ভালো মাছ পাচ্ছে আমাদের এষানকার জেলেরা।
এ দিকে স্থানিয় পর্যবেক্ষ মহল মনে করছেন, রেকর্ড পরিমান ইলিশ চাঁদপুর ঘাটে আসলেও দাম তুলনা মূলক কমেনি। সাড়ে তিন’শ হতে সাড়ে চারশ টাকা কেজির ছোট ইলিশ কিনতে পেরেছেন। সাধারন মানুষ তাতেই স্বস্থি । মাছের ভরপুর আমদানিতে তুলনামূলক দাম আরো কমার আশা করছিলেন ইলিশ প্রিয় মানুষগুলো। সাইজের ইলিশের দাম কিন্তু তেমন কমেনি।
শিরোনাম:
বুধবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।