মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনায় মাছের অভয়াশ্রম। এ দু’ মাস নদীতে জাল ফেলা যাবে না। আগামীকাল থেকেই শুরু হচ্ছে এ অভয়াশ্রম কর্মসূচি। জাটকা রক্ষায় প্রতি বছর এ দু’ মাস নদীতে অভয়াশ্রম থাকে। এ জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স কমিটির উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাটকাসহ সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ তথা অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নার্থে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল পিএএ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে এ জেলা খ্যাতি অর্জন করেছে। এ অর্জন ধরে রাখার দায়িত্ব চাঁদপুরবাসীর। কেবল জেলা প্রশাসক দেখবেন, নির্দেশ দিবেন, এমনটা নয়। বলতে গেলে এ জেলায় আমি ভাড়াটিয়া। নির্দিষ্ট সময় শেষে আমি এখান থেকে চলে যাবো। সরকার আমাকে বেতন দেয়। আমি সরকারের হয়ে কাজ করেছি। আমি এ জেলায় দুই বছর ৮ মাস ধরে কাজ করছি। আমি সকলকে নিয়ে নিরলস কাজ করেছি বিধায় বিগত দিনে অভয়াশ্রম কার্যক্রমে আমরা সফল হয়েছি। ভবিষ্যতেও এভাবে আপনারা কাজ না করলে ইলিশের বাড়ির নাম থাকবে না। আমরা যারা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি, হয়তো একদিন আমরা থাকবো না। সুতরাং যারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা, তাদের আন্তরিক হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আইজিপি মহোদয়ের বাড়ি যেহেতু চাঁদপুর, তিনি এ বিষয়ে নজর দেবেন। ইলিশ জাতীয় সম্পদ। এর রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। জেলা প্রশাসক বিদায় নিচ্ছেন, এটার হয়ত একটা প্রভাব পড়তে পারে। সে সুযোগ দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রের যে বিধি-বিধান আছে তা সকলকেই মানতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুল বাকীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লেফটেনেন্ট মোঃ জামাল উদ্দিন, চাঁদপুর নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল হাসেম, দৈনিক চাঁদপুর খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ঢালী, রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোঃ হযরত আলী বেপারী, বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, হানারচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার রাঢ়ী, জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওঃ মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজী, মতলব উত্তরের মৎস্য প্রতিনিধি মোঃ ওমর আলী প্রধানিয়া, ফরাজীকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সফিকুল ইসলাম, হাইমচর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম দুলাল পাটওয়ারী প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর মডেল থানার সিপিআই মোঃ হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোঃ শওকত কবির চৌধুরী, তরপুরচ-ী ইউপি সচিব তাসলিমা আক্তার, মোঃ আলমগীর সরদারসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, চাঁদপুর ছোট জেলা হলেও সরকারের কাছে এ জেলার গুরুত্ব বেশি। আমি চলে গেলে, তারপর কে আসবেন সেটা সরকার ভালো বুঝেন। এ জেলার ডিসি ও এসপি কে হবেন তা নিয়ে সরকার ভাবেন। সুতরাং আমার পরে যিনি আসবেন, তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ। কাজেই সরকার বুঝে শুনেই তাঁকে এখানে পাঠাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আমি খেটে খাওয়া মাঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আমি জানি, মানুষের কাছে গেলে কাজ হয়। এজন্যে আমি নদীতে জাটকা রক্ষা অভিযানে গিয়েছি। সে রেজাল্টও আপনারা পেয়েছেন। মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস জাটকা সংরক্ষণের জন্যে সরকার নদীতে জাল ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আজকের জাটকাই আগামী দিনের ইলিশ। জাটকা নির্বিচারে ধরা হলে ইলিশের উৎপাদন কমে যায়। তিনি যার যার অবস্থান থেকে নিরলস কাজ করতে আহ্বান জানান।